মোবাইল ফোন সেবায় বিশৃঙ্খলা ৮০০০০০ গ্রাহক হারাচ্ছে রবির সিম

কাজী হাফিজ; মোবাইল ফোন সেবায় বিশৃঙ্খলা দূর হচ্ছে না। একজন মোবাইল গ্রাহক ১৫টির বেশি সিম ব্যবহার করতে পারবে না—টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এক বছর আগে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। নির্ধারিত সীমার বাইরে বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার সিম। অনেকের ধারণা, এসব সিমের বেশির ভাগ ভুয়া ফেসবুক আইডি, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি এবং ভিওআইপির অবৈধ কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেসব গ্রাহকের নামে বা যাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে এসব সিম নিবন্ধন করে চালু রাখা হয়েছে তাদের অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। সীমার বাইরে সচল এসব সিমের মধ্যে রবির আট লাখ ৮০ হাজার, বাংলালিংকের চার লাখ ৯৫ হাজার, গ্রামীণফোনের চার লাখ ৬৫ হাজার এবং টেলিটকের চার লাখ ৯০ হাজার সিম রয়েছে। বিটিআরসি এ তথ্য সংগ্রহ করে তা গত ৬ এপ্রিল মোবাইল ফোন অপারেটরদের জানিয়ে দিয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সীমার বাইরে সিমের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ বিটিআরসির সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিকস ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম বা সিবিভিএমপি সার্ভারে এখনো মোবাইল অপারেটররা তাদের সব গ্রাহকের তথ্য দেয়নি। গত ২৭ মার্চ এ বিষয়ে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় মোবাইল অপারেটর পক্ষ থেকে গ্রামীণফোনের প্রতিনিধি জানান, তাঁদের প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহকের ডাটা সিবিভিএমপি সার্ভারে ইনপুট দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাংলালিংক প্রতিনিধি জানান, তাঁদেরও প্রায় ১২ হাজার গ্রাহকের একই অবস্থা। আর রবির প্রতিনিধি জানান, তাঁদের ৭০ হাজার গ্রাহক এখনো সিবিভিএমপি সার্ভারের বাইরে রয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৩০ এপ্রিল সিবিভিএমপি সার্ভারের সঙ্গে অপারেটরদের ডাটার সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সীমার বাইরের সিমের তথ্য দেওয়া হয়েছে ওই সমন্বয়ের আগেই।

এ অবস্থায় অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, তারা তাদের সিম সংখ্যা জানার জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেষ্টা করেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাচ্ছে না। কয়েকজন গ্রাহক জানায়, তারা অন্যান্য অপারেটরের সঙ্গে রবির সিমও ব্যবহার করে; কিন্তু অন্যান্য অপারেটরের সিমের তথ্য পেলেও রবির সিম সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ২৭ মার্চের ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২৬ এপ্রিলের শুরুতে বা ২৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার পর পরই ১৫টির বেশি সিম ব্যবহারকারীদের মোবাইল নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হবে। এর আগে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মোবাইল অপারেটররা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের এ বিষয়ে সতর্ক করবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে আরো সময় নিতে চায়। যদিও গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ বিষয়ে বিটিআরসিতে কোনো আবেদন করা হয়নি।

এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব তাদের লিখিত বক্তব্যে জানায়, গ্রাহকপ্রতি ১৫টির বেশি সিম না থাকা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের আলোচনা চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত সিম কিভাবে অপসারণ করা হবে তার প্রক্রিয়া বিটিআরসির নির্দেশনার ভিত্তিতে করা হবে।

অ্যামটবের আরো বক্তব্য, বিটিআরসির নির্দেশনার প্রতি অপারেটরা সব সময় শ্রদ্ধাশীল এবং এ সংস্থার নির্দেশনার আলোকেই এটা বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রসঙ্গত, মোবাইল ফোন সেবায় শৃঙ্খলা আনতে ২০১৬ সালের ১২ জুন গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০টি নির্ধারণ করা হয়। এরপর ওই বছরের ৪ আগস্ট এ সংখ্য কমিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি নির্ধারণ করা হয়। সে সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তৎকালীন সচিব জানিয়ে দেন, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে পাঁচটির বেশি সিম নিবন্ধন করা যাবে না। এরপর ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট বিটিআরসি এই মর্মে নির্দেশনা জারি করে যে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা এখন থেকে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম/রিম রাখতে পারবে। এর জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর। পরে সময়সীমা আরো দুই মাস বাড়িয়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া জানিয়ে দেওয়া হয়, একটি জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/জন্ম সনদের বিপরীতে কত সংখ্যক সিম আছে তা জানতে *১৬০০১# ডায়াল করে ফিরতি রিপ্লাইয়ে আইডি নম্বরের শেষ চারটি ডিজিট লিখে পাঠাতে হবে। অথবা আইডি নম্বরের শেষ চারটি ডিজিট লিখে এসএমএস করতে হবে ১৬০০১ নম্বরে। উভয় ক্ষেত্রে ফিরতি এসএমএসে আইডির বিপরীতে সিমের সংখ্যা এবং নম্বরগুলো জানা যাবে। কিন্তু তাতেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।

এ ছাড়া ভুক্তভোগীরা জানায়, বর্তমানে *১৬০০১# নম্বরের সহায়তার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফিরতি রিপ্লাইয়ে এনআইডি নম্বরের শেষ চার ডিজিট লিখলে জবাব আসছে ‘আইডির শেষ ডিজিট নিবন্ধিত সিমের সাথে ম্যাচ করছে না।’ এ সমস্যা হচ্ছে ১০ ডিজিটের স্মার্ট এনআইডির ক্ষেত্রে। তবে আগের ১৭ বা ১৩ ডিজেটের সাধারণ কাগজে লেমিনেটিং করা এনআইডি নম্বর ব্যবহার করলে ফল মিলছে।

বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কোনো গ্রাহকের ১৫টির বেশি সিম থাকলে যে সিমগুলো আগে নেওয়া হয়েছে সেগুলোও নিষ্ক্রিয় করা হবে। বহাল থাকবে পরে নেওয়া ১৫টি সিম।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ