নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের আপিল শুনানি আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া এ শুনানিতে আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে গত ২৭ আগস্ট, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিল অনুমতি প্রদান করা হয়। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ আরও কয়েকজন এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে, যা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছিল। তবে এর বৈধতা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ১৯৯৮ সালে আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন হাইকোর্টে রিট করেন এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। প্রাথমিক শুনানিতে হাইকোর্ট রুল দেন এবং ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ চূড়ান্ত শুনানি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করেন।

এই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি পেয়ে ২০০৫ সালে আপিল করা হয়। ২০১১ সালের ১০ মে, আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে। সংশ্লিষ্ট গেজেট ৩ জুলাই ২০১১ প্রকাশিত হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা পরিবর্তনের পর সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এর পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৬ অক্টোবর পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল করেন। গত বছরের ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নওগাঁর রানীনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রায় পুনর্বিবেচনার জন্য পৃথক আবেদন দাখিল করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্ক চলমান রয়েছে। এই আপিলের ফলে ভবিষ্যতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অবস্থান এবং বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কী রূপ নেবে তা স্পষ্ট হবে। বর্তমান আপিল শুনানি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আদালতের এ প্রক্রিয়া নজরদারির মধ্যে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভূমিকায় পরিবর্তন আসবে কি না, তাও গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শুনানি শেষ হলে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ