পরিবেশ ডেস্ক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শনিবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকার কেরানীগঞ্জের দড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ‘ঢাকা মহানগরী ও উপজেলা এলাকার ৪৪টি খাস পুকুর ও জলাশয় সংস্কার, উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প’ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানী এবং এর উপকণ্ঠের গুরুত্বপূর্ণ জলাধারগুলোর পুনর্গঠন, সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ঢাকা জেলা ও মহানগরে সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী মোট ১১৩টি খাস পুকুর রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি প্রথম পর্যায়ে সংস্কারের জন্য চিহ্নিত হয়েছে।
প্রকল্পে এসব জলাশয়ে সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সীমানা পিলার স্থাপন, পুনঃখনন, পাড়বাঁধাই, দূষণমুক্তকরণ, পানি প্রতিস্থাপন, বাঁধানো ঘাট, ওয়াকওয়ে, বেঞ্চ স্থাপন এবং বৃক্ষরোপণের কাজ করা হবে। এই উদ্যোগের ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টির পানি ধারণ, মৎস্যচাষ, কৃষি কার্যক্রম, বাফার জোন উন্নয়ন এবং নগরবাসীর জন্য পরিবেশবান্ধব বিনোদনকেন্দ্র সৃষ্টি হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ অপরিহার্য। ঢাকার পুকুরগুলো বর্তমানে দখল, ভরাট ও দূষণের চাপের মধ্যে রয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান—বাকি জলাশয়গুলোর তালিকা প্রণয়ন করে ধাপে ধাপে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এটি আগামী প্রজন্মের টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণ, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্পৃক্ত করা হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এটি কেবল পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে না, স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।
এছাড়াও তিনি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পলিথিন দূষণ পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে। সরকারের কঠোর নজরদারি এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমেছে। পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদের দায়িত্ববোধ অপরিহার্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান এবং কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়া।
পরিবেশ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার জলাধারগুলো স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ফিরে পাবে এবং নগরের জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।