জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ সমন্বয় ফ্রন্ট (বায়রা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট) মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়ায় আরোপিত ১০টি ‘অবাস্তব ও সিন্ডিকেটনির্ভর’ শর্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার, সৌদি আরবে আগের নিয়ম অনুযায়ী ২৪টি ভিসা পর্যন্ত সত্যায়নবিহীন বহির্গমন ছাড়পত্র পুনর্বহাল এবং বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
বায়রার সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এন এ এইচ সেলিম বুধবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটভিত্তিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের সমস্যা বহুদিনের এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পরও পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতায় কিছু উপদেষ্টার ‘নতজানু ও অপেশাদার’ কূটনৈতিক আচরণের কারণে প্রস্তাবিত ১০টি শর্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত বাস্তবসম্মত নয় এবং সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষাকারী।
সেলিম আরও বলেন, নেপাল সরকার ইতিমধ্যে এই শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। নেপালের মতো একটি দেশ যদি অযৌক্তিক শর্ত প্রত্যাখ্যান করতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন তা করতে পারবে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এসব শর্ত বাস্তবায়িত হলে মাত্র দুই–তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ এজেন্সি শ্রমবাজার থেকে বাদ পড়বে, যা হবে ‘সিন্ডিকেটের আধুনিক সংস্করণ’। তিনি সরকারের উপদেষ্টার কাছে লিখিত সুপারিশ পাঠানোর পাশাপাশি বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার পেশাদার কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক সভাপতি অভিযোগ করেন, আসন্ন বায়রা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেটচক্রের উদ্দীপনায় সিন্ডিকেটবিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। ৪ অক্টোবর বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামসহ দুই এজেন্সি মালিকের বিরুদ্ধে রুল ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুবেল হোসেন মামলা দায়ের করেন। তিনি আওয়ামী লীগের ‘সিন্ডিকেটঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত।
সেলিম বলেন, মামলার এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা কেউই ফখরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান থেকে মালয়েশিয়া যাননি; বরং গেছেন সিন্ডিকেট-সংশ্লিষ্ট লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী পরিচালিত ‘৫ এম ইন্টারন্যাশনাল’-এর মাধ্যমে। তাই মামলাটি ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের আগেই আরও ‘গায়েবি মামলা’ দেওয়া হতে পারে এবং এ ধরনের ষড়যন্ত্র রোধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
সেলিমের এই দাবিগুলো শ্রমবাজার ও প্রবাসী কর্মী প্রেরণের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং প্রফেশনাল নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের শ্রমবাজারে প্রেরণ প্রক্রিয়ায় এমন শর্ত বা মামলা প্রভাবিত হলে বাংলাদেশের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি ও প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।