নিজস্ব প্রতিবেদক
আশুলিয়ায় গত বছরের ৫ আগস্ট ছয়জনকে হত্যা ও মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হকের জেরা আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ অনুষ্ঠিত হবে। আসামিপক্ষ এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবীরা তাকে জেরা করবেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবজালুলের জেরা শেষে আরও দু-তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী মাসের মাঝামাঝির মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গতকাল ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন এসআই শেখ আবজালুল হক। তিনি রাজসাক্ষী হতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছিলেন এবং মামলার বিষয়ে নিজের জানা তথ্য আদালতে তুলে ধরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তিনি তার জবানবন্দিতে মামলার প্রাসঙ্গিক তথ্য তুলে ধরেছেন। সাক্ষ্য প্রদান শেষে তিনি আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
গতকালের কার্যক্রমে বেলা ১১টার দিকে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন আবজালুল। প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের মধ্যে তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয়। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে মরদেহ পোড়ানোর ঘটনাটি তিনি প্রত্যক্ষ করেননি। ১৫ আগস্ট থানায় অস্ত্র-গুলি জমা দিতে গেলে সহকর্মীদের কাছ থেকে ওই ঘটনার বিস্তারিত শোনেন বলে উল্লেখ করেন। এতে তিনি জানান, ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত পুলিশের একাধিক সদস্য মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ এ এ মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ওই সময়ে আদালতে হাজির থাকা আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। আদালত তার দোষ স্বীকারের অংশটি রেকর্ড করে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে অনুমোদন দেয়।
সাক্ষ্যগ্রহণের ধারাবাহিকতায় ১৮ নভেম্বর নির্ধারিত কার্যক্রম বিশেষ পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে ১২ নভেম্বরও একই কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। তবে এসব তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। ৫ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, তার সামনে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।
৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার বিবরণ দেন। পাশাপাশি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। ২৯ অক্টোবর জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল ওসির নির্দেশে রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে থানায় জমা দেন। এটি মামলার আলামত হিসেবে সংযুক্ত করা হয়।
১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি শেষে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সাক্ষ্য হিসেবে বক্তব্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। এর আগে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, যিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় সংঘটিত ঘটনাগুলোর সার্বিক বিবরণ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন।
মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা পড়ে গত ২ জুলাই। এ সময় প্রসিকিউশন ৩১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র, ৬২ জন সাক্ষী এবং ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণসহ দুটি পেনড্রাইভ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। পরে ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।
মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই আবজালুল হক এবং কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের মরদেহ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। একজন জীবিত থাকলেও তাকেও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।


