পাঁচ দেশে কাগুজে রপ্তানি ও কোটি টাকার অনুদান জালিয়াতির মামলা

পাঁচ দেশে কাগুজে রপ্তানি ও কোটি টাকার অনুদান জালিয়াতির মামলা

অর্থনীতি ডেস্ক

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যাদের মধ্যে ১১ জন কাস্টমস কর্মকর্তা, অডিট ফার্ম ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত। অভিযোগে বলা হয়েছে, পাঁচটি দেশে রপ্তানির কাগুজে নথি দেখিয়ে সাড়ে ১৮ কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেন ও ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রণোদনা আত্মসাতের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপ-পরিচালক মো. আহসান উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মামলার প্রধান আসামিরা হলেন—রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দো এম্পেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জিয়া হায়দার মিঠু ও এমডি আলোক সেনগুপ্ত। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কেএইচএল এক্সাম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম রাসেল, জি আর ট্রেডিং করপোরেশন সি অ্যান্ড লিমিটেডের পরিচালক বেগম রাসিদা পারভীন রুনু, এ অ্যান্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. আলতাফ হোসেন ও মো. আব্দুল জলিল আকন, প্যান বেঙ্গল এজেন্সিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ কে এন্টারপ্রাইজের মালিক আবুল কাসেম খান।

অডিট প্রতিষ্ঠান হিসেবে মামলায় আসামি করা হয়েছে—এ কাসেম অ্যান্ড কো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসের মালিক মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন ও জিয়াউর রহমান জিয়া, এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনারের মালিক জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাস, মুহাম্মদ সাজিদুল হক তালুকদার ও নাসির উদ্দিন আহমেদকে।

এছাড়া, এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর কবির ও মবিন উল ইসলাম, সাবেক সহকারী কমিশনার মো. জয়নাল আবেদীন, রাজস্ব কর্মকর্তা জমির হোসেন, এ এইচ এম নজরুল ইসলাম, আমির হোসেন সরকার, গৌরাঙ্গ চন্দ্র চৌধুরী, ফরিদ উদ্দিন সরকার ও মো. মঞ্জুরুল হক, সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাত্তার ও বাসুদেব পালককে আসামি করা হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (এক্সপোর্ট) মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. মোহাম্মদ আনোয়ার জাহানকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে পণ্য রপ্তানি দেখিয়ে দো এম্পেক্স লিমিটেডের সুবিধার্থে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা করায়। ৩৪টি রপ্তানি চালানের মূল্যবাবদ প্রণোদনা হিসেবে প্রায় ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে কোনো রপ্তানি হয়নি।

এজাহার অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দো এম্পেক্স লিমিটেড মোট ৪১টি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে সরকারের প্রণোদনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৭টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির সত্যতা পাওয়া গেলেও ৩৪টি বিল অব এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে কোনো পণ্যই বিদেশে রপ্তানি হয়নি। এই ৩৪ বিলের জন্য অগ্রিম হিসাবে ২২ লাখ ১৮ হাজার ১৭.৪৪ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮ কোটি ৬০ লাখ ৯১ হাজার ৪০৪ টাকা) অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি দেখিয়ে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার টাকা নগদ প্রণোদনা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করেছে।

মামলার তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট আদালত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটনার দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এই ধরনের কাগুজে রপ্তানি ও প্রণোদনা জালিয়াতি অর্থনৈতিক ক্ষতি সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সরকারের প্রণোদনা নীতির কার্যকারিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য