নিজস্ব প্রতিবেদক
বিয়ে করে ফাঁদে ফেলে তরুণী ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার পলাতক এই আসামি দেশে অন্তত ২০টি বিয়ে করেছেন। মেডিক্যাল ছাত্রী থেকে কিশোরী অনেকেই তার প্রলোভনে পা দিয়েছে। এদিকে, পলাতক এই অপরাধীকে ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।
গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে রবিউলের অন্তত ৫/৭টি সালিশ করেছেন গণমান্য ব্যক্তিরা। বিয়ের পর স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করার পাশাপাশি শ্বশুরদের ভয় দেখিয়েও টাকা আদায় করতেন তিনি। আট বছর আগে সেকেন্দার আলী নামে তার এক শ^শুরকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতে গিয়ে গুলিভর্তি রিভলবারসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাভ খান।
সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখানোর ঘটনায় রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেন ডিবি পশ্চিমের উপপরিদর্শক সুজন কুমার কু-ু। মামলার এজাহারে আরও অনেকের কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সেকেন্দার আলীর বাসার সামনে থেকে তাকে গুলিভর্তি পিস্তলসহ আটক করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, আরাভ এর আগে একাধিক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তিনি ভয়ভীতি ও প্রভাব খাটিয়ে শ্বশুরের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করতেন। এ ঘটনায় রবিউল ওরফে আরাভের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
আরাভ খান যাদেরকে বিয়ে করেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসাবিদ্যায় পড়াশোনা করতে ঢাকায় আসা সুরাইয়া আক্তার কেয়া। আরাভ খানের ফাঁদে পড়ে কেয়ার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন থেমে যায়। অপরাধজগতে জড়িয়ে আরাভকে বিয়েও করেন। মেহেরপুরের কৃষকের মেয়ে কেয়া আরাভের সঙ্গে হত্যা মামলার আসামি হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
কেয়ার বাবা আবুল কালামের অভিযোগ, আরাভ নিজেকে ধনীর ছেলে দাবি করে তার মেডিক্যাল পড়–য়া মেয়েকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর আরাভ ওরফে আপনের আরও স্ত্রীর খবর তারা জানতে পারেন। আরাভের সঙ্গে অপরাধে জড়িয়ে কেয়া কারাগারে যান। পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে মেয়ে আরেক প্রবাসীকে বিয়ে করে এখন মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। এখন মেয়ের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানায় আরাভের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গেছে ৯টি। তার গ্রামের এক জনপ্রতিনিধি জানান, আরাভের ৫/৭টি বিয়ের বিচার-সালিশে স্থানীয় জনিপ্রতিনিধিরা অংশও নিয়েছেন।
কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয়ে রবিউল প্রায় ২০টি বিয়ে করেন। পরে তার স্ত্রীরা মামলা করেছেন, এ নিয়ে এলাকায় বিচার-সালিশও হয়েছে একাধিকবার।
এদিকে, আরাভ খানের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ওই চিঠি ইন্টারপোল ‘অ্যাকসেপ্ট’ করেছে। পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় এ আসামির যে নাম আছে, সেই ‘রবিউল ইসলামের’ নামে নোটিশ জারি করতেই পাঠানো হয়েছে চিঠি।
পুলিশ বলছে, ২০১৮ সালে ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের একজন পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। দেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে ভারত যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাই চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। একটি স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ তারকাদের দাওয়াত দেওয়ার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এর পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ ও প্রশাসন