সিএসআর খাতের অর্ধেক ব্যয় ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর

সিএসআর খাতের অর্ধেক ব্যয় ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিএসআর খাতের অর্ধেক ব্যয় ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর
বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ৬১টি ব্যাংক মিলে করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) খাতে গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে যে পরিমাণ খরচ করেছে, তার অর্ধেকই করেছে ইসলামী ধারার ১০ ব্যাংক। ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে সব ব্যাংক মিলে সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে মোট ৫১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ধারার ১০ ব্যাংক মিলেই খরচ করেছে ২৫৫ কোটি টাকা। আর সব ব্যাংক মিলে ২০২২ সালে সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে এক হাজার ১২৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি।

২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ৭৫৯ কোটি এবং ২০২০ সালে ৯৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
২০২২ সালে সিএসআর খাতের ব্যয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটি ৩২৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে এ খাতে। আর ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে সিএসআর খাতে ইসলামী ব্যাংক একাই ব্যয় করেছে ১২৫ কোটি টাকা।

অবশ্য এর প্রায় পুরো টাকাটাই খরচ করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। ইসলামী ধারার বাকি ব্যাংকগুলোও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ করেছে।
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ২০২১ সালের করপরবর্তী নিট মুনাফা থেকে ৬৩ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ছাড়া কম্পেনসেশন রিয়েলাইজড এ/সি, জাকাত ফান্ড ও অন্যান্য উৎস থেকে খরচ করেছে ১৯২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার নিট মুনাফার ১ শতাংশ সিএসআর খাতে ব্যয় করবে।

এর মধ্যে মোট সিএসআর বাজেটের মধ্যে শিক্ষা খাতে ৩০ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৩০ শতাংশ, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে পারে। এ ছাড়া অবশিষ্ট ২০ শতাংশ আয়-উৎসারী কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য খাতের আওতায় ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া নভেম্বরে আরেক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিলের আকার বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিএসআর খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫ শতাংশ হারে অনুদান প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৯টি ব্যাংক শিক্ষা খাতে ৩০ শতাংশ, ১৩টি ব্যাংক স্বাস্থ্য খাতে এবং তিনটি ব্যাংক পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ সিএসআর ব্যয় নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছে। তা ছাড়া ৪৭টি ব্যাংক অন্যান্য খাতে ২০ শতাংশের বেশি ব্যয় করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে, যার পরিমাণ মোট সিএসআর ব্যয়ের ৬৯ শতাংশ বা ৩৫৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের আওতায় প্রধানত ২০২২ সালের প্রথমার্ধে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে শীতার্ত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়, যার বেশির ভাগ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

এর আগে করোনার কারণে ব্যাংকগুলোকে সিএসআর খাতের ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচের নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের ব্যাংকগুলো ৪৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা সিএসআর ব্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতেই ব্যয় করে ২৩৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা মেনে খরচ না করলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই রেটিংয়ে প্রভাব পড়বে বলে জানানো হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘সিএসআরের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকগুলো একটি মানবিক মূল্যবোধে বিকশিত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। গরিব, দুস্থ, অসহায় মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংক সাদাকাহ তহবিল গঠন করে। কোটি কোটি মানুষের কল্যাণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। ইসলামী ব্যাংকগুলো সিএসআর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, দাতব্য প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেছে ২.২০ বিলিয়ন টাকা।’

অর্থ বাণিজ্য