মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা ৩৫ বেসিস পয়েন্ট কাল (১ নভেম্বর) থেকে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ঋণের সুদহার ১১ শতাংশ অতিক্রম করবে। যা চলমান সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেন্স রেট নির্ণয় করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অক্টোবর মাসজুড়ে ট্রেজারি বিলের নীতিহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধিই স্মার্ট সুদহার বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে। কারণ, ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয় স্মার্ট রেটের ওপর ভিত্তি করে। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার অক্টোবরে ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের চার মাস স্মার্ট সুদহার ছিল আগস্ট মাসে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জুলাই মাসে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, জুন মাসে ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং মে মাসে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতিতে টাকার সরবরাহ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার অক্টোবরে ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ হবে। যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকগুলো স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। সে হিসেবে আগামী নভেম্বর মাস থেকে ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ০৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকার বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকারি সিকিউরিটিজ, ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করে অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশ নিয়ে থাকে ব্যাংক খাত থেকে। আর ব্যাংকগুলোও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় এসব খাতে বিনিয়োগ করছে। এসব বন্ডের সাম্প্রতিক নিলাম ইঙ্গিত দিচ্ছে স্মার্ট সুদহার আগামীতে বাড়তে থাকবে। বিশ্বের অনেক দেশ সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের দেশেও এখন সেই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এটি একটি ভালো দিক যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এদিকে ঋণের সুদহার বৃদ্ধিতে ব্যবসায় চাপ পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। গত মাসে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করে ব্যাংক ঋণের সুদহার না বাড়ানোর অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানির শুল্ক বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণে এমনিতেই চাপে আছে বেসরকারি খাত। সবকিছু মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঋণের সুদ বাড়লে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার খরচ বাড়বে, চাপ পড়বে ব্যবসায়ীদের ওপর। ঘনঘন যাতে ঋণের সুদ না বাড়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।