মঙ্গল অথবা বুধবারে ঘোষণা তপসিল নিয়ে প্রস্তুত ইসি।

মঙ্গল অথবা বুধবারে ঘোষণা তপসিল নিয়ে প্রস্তুত ইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন যত ব্যস্ততা শুধুই তপসিলকে ঘিরেই। ইতিমধ্যেই তপসিল ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে রেখেছে কমিশন। কমিশন সভার মাধ্যমে সেটি অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতাই কেবল বাকি রয়েছে। যা এ সপ্তাহের যে কোনো দিনই হতে পারে। বিশেষ করে মঙ্গলবার অথবা বুধবারই জাতীয় নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আজ রবিবার কমিশন সভা আহ্বানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। ভোট হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ইসির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তপসিল ও ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ইত্তেফাককে বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরা প্রায় শতভাগ প্রস্তুত। বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। এ সপ্তাহের যে কোনো দিনই তপসিল ঘোষণা হতে পারে।

ইসি সূত্র জানায়, এবার তপসিল অনুমোদন ও ঘোষণা একই দিন হতে পারে। অর্থাৎ, কমিশন সভা যেদিন হবে সেদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য রেকর্ড এবং একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে সেই তপসিল ঘোষণা করবেন। সেজন্য তপসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই ব্যস্ত সময় পার করছে কমিশন। এখন সিইসির ভাষণ প্রস্তুতি ও নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা। এছাড়াও বিগত সময়ের সিইসির প্রদত্ত ভাষণগুলো পর্যালোচনা চলছে।

তপসিল ঘোষণার পরই শুরু হবে ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’ এবং নির্বাচনি আইন অনুসারে এ সময়ে যে কোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন বন্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচনি ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের আগ পর্যন্ত এ অবস্থা বহাল থাকবে। এ সময় সরকার নির্বাচনকালীন সরকারে পরিণত হবে। সরকারের কার্যক্রম রুটিন ওয়ার্কে সীমিত হয়ে পড়বে।

বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের বিপরীতমুখী এমন অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরে হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আর দ্রুতই সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করা হবে। যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করতে হবে।

ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। গত ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনাও শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার জন্য ইসির হাতে খুব বেশি সময় বাকি নেই।

ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনি কাঠামোতে বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে। সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন দলের নিবন্ধনের কাজও শেষ হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। আর ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪টিতে দাঁড়িয়েছে। ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে। তপসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা, আসনওয়ারি ভোটার তালিকার সিডির প্রিন্ট শেষ হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চূড়ান্ত হয়েছে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালাও। সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলের অনুমতি দিয়ে সাংবাদিক নীতিমালাও সংশোধন করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর এক সংলাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসির সর্বশেষ প্রস্তুতি প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

ইসি সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে। এর বাইরে নির্বাচনি প্রশিক্ষণে খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি।

‘ইলেকশন অ্যাপ’ উদ্বোধন আজ

প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলে যে কোনো জটিলতা এড়াতে এবারের নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জামানতের টাকা পরিশোধের সুযোগও থাকছে। অন্যদিকে ভোটকেন্দ্রে নাম ও ভোটার নম্বর খুঁজে পাওয়ার ভোগান্তি কমাতে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে কমিশন। আজ রবিবার সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। এই অ্যাপে ভোটারের তথ্যের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার (এসপি) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের পরিচয় ও ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ