গাজায় নতুন হামলায় দুইজন নিহত, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত, জাতিসংঘ শান্তি প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে

গাজায় নতুন হামলায় দুইজন নিহত, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত, জাতিসংঘ শান্তি প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর রাখার ঘোষণা দিয়েও গাজায় নতুন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতের হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এই অবস্থায় শান্তি প্রচেষ্টাকে ‘হাতছাড়া না করতে’ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েল বুধবার সন্ধ্যায় গাজায় হামলা চালিয়ে অন্তত দুইজনকে হত্যা করেছে, এমনকি যুদ্ধবিরতির পুনর্ব্যক্তির পরও এ হামলা চালানো হয়েছে। হামলা পরিচালিত হয় উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকায়, যেখানে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা এমন একটি স্থানে হামলা চালিয়েছে যেখানে অস্ত্র মজুত ছিল এবং যা তাদের সেনাদের জন্য ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ সৃষ্টি করেছিল। আল-শিফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই হামলায় দুইজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।

এটি গাজার পরিস্থিতিকে নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, যেখানে ইতিমধ্যেই অস্ত্রবিরতির বিষয়টি ভঙ্গ হতে চলেছে। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ‘প্রতিশোধমূলক হামলার’ নির্দেশ দেন। এই হামলায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ১০৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামাসের সিনিয়র যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এই হামলা করেছে এবং “ডজনখানেক” যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল পরবর্তীতে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ঘোষণা দিলেও, সেই ঘোষণার কিছু ঘণ্টা পরই নতুন হামলা চালানো হয়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

এই সহিংসতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সর্বশেষ হামলা সত্ত্বেও অস্ত্রবিরতি “ঝুঁকির মুখে নেই”। অন্যদিকে, মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এই হামলায় হতাশা প্রকাশ করলেও জানায়, তারা এখনো যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক এক বিবৃতিতে গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এই হামলায় অনেক শিশু নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক এই হামলাকে “ভয়াবহ” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং শান্তি প্রচেষ্টাকে “হাতছাড়া না করতে” সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। একই আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও।

হামাস এদিকে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, রাফাহে যে ঘটনায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে, সেটার সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের কোনও সম্পর্ক নেই এবং তারা অস্ত্রবিরতি মানার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে, সাম্প্রতিক হামলার কারণে তারা এক মৃত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। হামাস জানায়, ইসরায়েলের নতুন হামলা চলতে থাকলে সেটি “বন্দিদের মরদেহ উদ্ধার অভিযানে বাধা সৃষ্টি করবে।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রেডক্রসের প্রতিনিধিদের ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, দাবি করে যে, এমন সাক্ষাৎ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। হামাস এই নিষেধাজ্ঞাকে বন্দিদের অধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে, “এটি ইসরায়েলের ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও অনাহারে রাখার নীতিরই অংশ।”

গাজার পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক এবং এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কুটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরালো করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক