আইন আদালত ডেস্ক
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ আগামী ২৭ নভেম্বর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পৃথক তিন মামলার রায় ঘোষণা করবে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলার এক আসামির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রায়ের দিন ধার্য করেন। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়নি এবং তারা আত্মপক্ষ শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
দুর্নীতিদমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা—যাবজ্জীবন কারাদণ্ড—প্রত্যাশা করেন। কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহীনুর রহমান অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে তার খালাসের আবেদন করেন। শুনানির সময় খুরশীদ আলমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দুদক গত জানুয়ারি মাসে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়।
শেখ পরিবারের বাইরে আসামিদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
গত ৩১ জুলাই বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বাকি তিন মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, আসামিরা অযোগ্য হলেও সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
এই মামলার রায় দেশের প্রশাসনিক জগতে এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকর হলে সরকারি সম্পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন হবে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


