পাগলা মসজিদে রেকর্ড দানবাক্স খোলা: ৩৫ বস্তা টাকার সংগ্রহ

পাগলা মসজিদে রেকর্ড দানবাক্স খোলা: ৩৫ বস্তা টাকার সংগ্রহ

জেলা প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ১৩টি দানবাক্স খোলা হয়। প্রতিনিয়ত তিন মাস পর পর দানবাক্স খোলার নিয়ম অনুযায়ী এবার দানবাক্সগুলো তিন মাস ২৭ দিন পর খোলা হয়েছে। দানবাক্সগুলো থেকে মোট ৩৫ বস্তা টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা এবং সোনার গয়না পাওয়া গেছে।

এবারের খোলার সময় গণনার কাজের দায়িত্বে প্রায় ৫০০ জন অংশ নেন। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা নিশ্চিত করেন, “এবার আমরা তিন মাস ২৭ দিন পর দানবাক্স খুলি। এবার রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা গণনার কাজ করছেন।”

এর আগে, ৩০ আগস্ট ২০২৫ সালে ১৩টি দানবাক্স থেকে রেকর্ড ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল। সাড়ে ১১ ঘণ্টার গণনায় ৫০০ জনের একটি দল অংশ নেয়। এছাড়া ১২ এপ্রিল ২০২৫ সালে ১১টি দানবাক্স থেকে ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল। সেই সময়ও স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা ও রুপার অলঙ্কার পাওয়া যায়।

গত বছরের বিভিন্ন খোলার ঘটনাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ সালে ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায় এবং গণনার পর তা রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা হয়। ১৭ আগস্ট ২০২৪ সালে ৯টি দানবাক্স ও একটি ট্যাঙ্ক খোলার পর ২৮ বস্তা টাকার হিসাব করা হয়েছিল, যা ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা রেকর্ড করা হয়।

শনিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন উপস্থিত থেকে দানবাক্স খোলার কাজ তদারকি করেন। ৩২টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয় গণনার জন্য। গণনার কাজে অংশগ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জেসমিন আক্তার, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান মারুফ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী হারেছীসহ ৪৫০–৫০০ জন ছাত্র, ব্যাংক স্টাফ ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাগলা মসজিদে দান করলে মনের ইচ্ছা পূর্ণ হয় এমন বিশ্বাসে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এখানে দান করেন। নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, রুপার অলঙ্কার, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং বৈদেশিক মুদ্রাও দান করা হয়।

মসজিদটি কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। মূল মসজিদটি মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হলেও বর্তমান মসজিদ কমপ্লেক্স ৩ একর ৮৮ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি বর্তমানে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানায়, আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। কমপ্লেক্সে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এটি নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

সারাদেশ