করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতির মধ্যে দেশে ফিরে আশা বিদেশফেরতদের প্রায় ৭০ শতাংশ জীবিকাহীন রয়েছেন। সম্প্রতি দেশে ফেরত আসা ১২ জেলায় অভিবাসীদের ওপর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) পরিচালিত এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
সংস্থাটি বলছে, এসব বিদেশফেরত অভিবাসী আর্থিক ও স্বাস্থ্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
আইওএম পরিচালিত ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার আইওএম’র বাংলাদেশ অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একেকজন অভিবাসী কর্মী গড়ে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে সহায়তা দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ও বৃহৎসংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মীদের ফেরত আসার ফলে সারাদেশে রেমিট্যান্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে মোট এক হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত ব্যক্তির ওপর চালানো জরিপের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানায় আইওএম।
সংস্থাটি জানায়, ২০২০ সালের মে এবং জুলাই মাসে দেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে সাতটি জেলায় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অভিবাসী কর্মীদের সুনির্দিষ্টভাবে বিপদাপন্নতা তৈরি হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে উপার্জন ব্যবস্থা, সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার নেটওয়ার্কের অভাবে হাজারও অভিবাসী কর্মী প্রবাসে যে দেশে কাজ করছিলেন তা ছেড়ে বাংলাদেশে তাদের জেলায় ফিরে আসতে বাধ্য হন।
মোট ৬৪ শতাংশ আন্তর্জাতিক অভিবাসী উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে তাদের কর্মস্থল দেশে তথ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতে তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
আইওএম জানিয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ শতাংশ বলেছেন, যে দেশে তারা ছিলেন সেই দেশ ত্যাগ করতে বলায় তারা বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। ২৩ শতাংশ জানান, তারা কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছেন। ২৬ শতাংশ জানান, তাদের পরিবার তাদের ফেরত আসতে বলায় তারা ফিরে এসেছেন। ৯ শতাংশ জানান, তাদের বলা হয়েছে সীমন্ত বন্ধ করে দেয়া হবে এবং আটকে পড়ার ভয়ে তারা ফেরত এসেছেন।
আইওএম বলছে, সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় ৫৫ শতাংশ জানান, তাদের ওপর শোধ না করা বর্ধিত ঋণের বোঝা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুর কাছে ঋণগ্রস্ত, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বনির্ভর দল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত। ১৫ শতাংশ পাওনাদারদের কাছে ঋণগ্রস্ত। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ নিয়েছেন। অন্যদিকে এমএফআই, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে গৃহীত ৬৫ শতাংশকে ঋণের জন্য সুদ বহন করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। মহাজন বা সুদে টাকা ধার দেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঋণগ্রহীতাকে সুদ গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ।
সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারীদের তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে প্রায় ৭৫ শতাংশ জানান, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে যে দেশে কাজ করতেন সেই দেশেই আবার যেতে চান।
অপরদিকে, ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আরও ভালো বেতনের চাকরি নিশ্চিতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী।
বিজ্ঞপ্তিতে আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময় সবচেয়ে বিপদাপন্ন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা। বৈশ্বিক চলাচলের ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট মন্দার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী এবং রেমিট্যান্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর। বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন বিষয়ক গবেষণায় অবদান রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান মনে করেন, এই গবেষণা বিদেশফেরত অভিবাসীদের টেকসই পুনঃএকত্রীকরণে প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল তৈরিতে সরকারি প্রচেষ্টাকে সাহায্য করবে।