নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের প্রচারণার আজ শেষ দিন

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের প্রচারণার আজ শেষ দিন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের প্রচারণার আজ শেষ দিন। মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে যাবে সকল নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। তাই শেষ মুহূর্তে প্রচারণার ব্যস্ত মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে চান নিজের প্রতীক ও উন্নয়ন বার্তা। একইসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে একের পর এক শো-ডাউন করছেন প্রার্থীরা। তাই সকাল থেকে প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচারণা ও পদচারণায় মুখরিত নারায়ণগঞ্জ শহর।

শুক্রবার প্রচারণার শেষ দিন সকালে হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে শহরে শো-ডাউন করেন ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ। শহরের ডিআইটি মসজিদের সামনে থেকে দলীয় প্রতীক হাতপাখা হাতে নিয়ে শহরে মিছিল করেন তারা। মিছিলটি পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে।

দুপুরে জুম্মার পর একই স্থান থেকে ছয় থেকে সাতশ নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে শো-ডাউন করেন খেলাফত মজলিশের প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন। দলীয় প্রতীক দেয়ালঘড়ি নিয়ে তারা শহর প্রদক্ষিণ করেন।

শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো শহর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকে মুখরিত। সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নৌকার স্লোগানে মুখরিত তারা। উচ্ছাসিত মানুষের ঢলে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। তাদের পথচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ যেন আরেক নারায়ণগঞ্জ।

এদিকে শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় চলিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পথসভা। সেখানে দল থেকে তাকে সমর্থন জানাতে উপস্থিত হয়েছে জাতীয়, স্থানীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমর্থকের ঢল। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পথসভা জনস্রোতে পরিণত হয়। এ সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। জনসভা শেষে সেই জনস্রোত নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে বিশাল শো-ডাউন করেন আইভী।

অন্যদিকে বন্দরে শো-ডাউন করেন হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এড. তৈমুর আলম খন্দকার। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তিনিও যেন নেমেছেন নিজের শক্তি প্রদর্শনে। গাড়িতে চড়ে নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে বন্দরের বিভিন্ন এলাকার শো-ডাউন করেন তিনি।

একইভাবে শো-ডাউনে নামেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা মূল শহরে আইভীর প্রচারপণা থাকায় শহরের অন্যান্য এলাকার শো-ডাউন করেন তারা। ফলে শহরের আশেপাশের রাস্তাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম শুক্রবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মোট ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩০টিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব কেন্দ্রেই মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া পুলিশের বিশেষায়িত যেসব ব্যাটালিয়ন আছে, তারাও মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজিবির টিম মোতায়েন থাকবে।

এসপি সাংবাদিকদের বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই, নির্বাচন ঘিরে কোনো প্রার্থীর নেতাকর্মী বা সমর্থকদের গ্রেপ্তার বা কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়নি। আমরা শুধু রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছি। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এবং যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, শুধু তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে অথবা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ বজায় থাকবে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে চলবে ভোটগ্রহণ। পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জনসহ মোট ১৮৯ প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।

মেয়র পদে ৬ প্রার্থী হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস, আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।

২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর তৃতীয়বারের মতো এই সিটিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন।

সারাদেশ