নিজস্ব প্রতিবেদক
অভাবে পড়ে ১৮ দিনের মেয়ে শিশুকে বিক্রি করে দেন এক বাবা। প্রত্যাশা ছিল, মেয়েকে বিক্রি করে দিলে বেশ কিছু নগদ টাকাও পাওয়া যাবে আর মেয়েটাও ভালো থাকবে। কিন্তু যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, এক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সেই আশা গুড়ে বালি হয়ে গেছে তার। প্রতারক চক্রটি তাদের সন্তান বিক্রির সিংহভাগ টাকা নিয়ে গেছে। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নেছারাবাদ থানা পুলিশের একটি দল ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করে ঢাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এরপর গতকাল শুক্রবার শিশুটিকে তার মা–বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামে। দরিদ্র ওই বাবার নাম পরিমল ব্যাপারী (৫৫)।
পরিমল ব্যাপারী বলেন, তার কোনো জায়গা-জমি নেই। অন্যের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করেন। ঘটক হিসেবে সামান্য কিছু আয় হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান, তা দিয়েই সংসার চলে।
কিছু দিন আগে তার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। কদিন পর উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামের বিজন হালদার ও রনজিত কুমার তার কাছে আসেন। তারা বলেন, মেয়েটিকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবেন। মেয়েটিও সেখানে ভালো থাকবে। অভাবের কারণে তিনি শিশুটিকে দত্তক দিতে রাজি হন।
পরিমলের স্ত্রী কাজল ব্যাপারী বলেন, তাদের কাছে ঢাকা থেকে প্রাইভেট কারে করে একটি বড়লোক পরিবার যায়। তারা বিজনের কাছে টাকা দেন। এরপর তার বাচ্চাটি নিয়ে যান। বিজন তাদের শুধু ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপর থেকে বিজনকে তারা আর খুঁজে পাননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিজন হালদার দাবি করেন, দরিদ্র পরিমলের মেয়ের ‘ভবিষ্যতের কথা ভেবে’ ধনাঢ্য নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে দত্তকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। তবে টাকা লেনদেনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানার ওসি মো. আবির মোহাম্মাদ হোসেন জানান, শিশুটিকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শিশুটিকে বিক্রির কথা তিনি শুনেননি।
দত্তক নেওয়া পরিবার বলেছে, তাদের কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে শিশুটি মা–বাবার কাছে রয়েছে। রোববার ওই মেয়ে সন্তানসহ তার মা–বাবাকে আদালতে তোলা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।