স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, একটি কবিতা লেখা হবে / তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে/ লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-/ ‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’ জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা/ কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী? /গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনলেন তাঁর অমর কবিতা খানি/ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের। আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১৯ মিনিটের এক জাদুকরি ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, ‘রাজনীতির কবি’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, ৯ মাসের লড়াই এবং মহান স্বাধীনতা অর্জন। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে আর থাকা যাবে না এ ধারণা বাঙালির মনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছিল ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের পরপরই। ফলে স্বাধীনতাতেই সমাধান দেখছিল আপামর জনতা। এ নিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর লড়াই-সংগ্রাম চলে। ধাপে ধাপে বিজয় অর্জনের পথে বাঙালি এগিয়ে গেলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকে। প্রশ্ন ছিল, কীভাবে সেই স্বাধীনতা অর্জিত হবে? ৭ মার্চ বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখা দেন। এ ভাষণে জাতিকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানের পাশাপাশি ছিল দিকনির্দেশনাও। সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এদিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আলস্নাহ।’ বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ বাঙালি জাতির কাছে সব সময়ই বিশেষ কিছু। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো বিশ্ব ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করে ভাষণটিকে। সংস্থাটি বিশ্বের ৭৮টি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথি ও বক্তৃতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনকের ঐতিহাসিক ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করতে দেয়নি তখনকার পাকিস্তান সরকার। কিন্তু পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় তা ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আসেন বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। মঞ্চে উঠেই তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির কণ্ঠে ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ ধ্বনিত হয়। বঙ্গবন্ধু দরাজ গলায় তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি…।’ ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু সামরিক শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ তথা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। জবাবে ক্ষুব্ধ বাঙালি রাজপথে নেমে আসে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয়, তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দেন। ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি নতুন প্রেরণা খুঁজে পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে রক্ত টগবগিয়ে উঠেছিল মুক্তিপাগল বাঙালির। মুহূর্তেই উদ্বেল হয়ে ওঠে জনতার সমুদ্র। মুহুর্মুহু স্স্নোগানে কেঁপে ওঠে বাংলার আকাশ। নড়ে ওঠে হাতের ঝান্ডায় তাদের গর্বিত লাল-সবুজ পতাকা। পতাকার ভেতরে সোনালি রঙে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্র। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল। একাত্তরের এই দিনে ঢাকা ছিল লাখো মানুষের শহর। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্স্নোগানে ঢাকা শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠে। কখন ঘটবে বিস্ফোরণ এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করে সারা শহরে। শেখ মুজিব নিজ মুখে স্বাধীনতার ঘোষণা করলে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে নির্বিচারে বাঙালি নিধনের ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে সুযোগ দেননি হানাদারদের। টান টান উত্তেজনার মধ্যে রেসকোর্সে অনুষ্ঠিত হয় এই সমাবেশ। বিচ্ছিন্নতাবাদীর দায় চাপিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে যাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা বিলম্বিত করতে না পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু ভাষণটি দেন। সরাসরি না দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। আর বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে এ নির্দেশ পেয়েই নিরস্ত্র বাঙালি জাতি সশস্ত্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে। বাঙালির দেশপ্রেমের অগ্নিশিখায় পরাস্ত করে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে। একাত্তরের এই দিনটিতে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে অগ্নিস্ফূলিঙ্গের মতো জেগে ওঠা পুরো বাংলাকে এক সুতোয় বাঁধেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, রাজনৈতিক কবি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণটিতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ২৩ বছরের লড়াই-সংগ্রামের বর্ণনা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতনের অপচিত্র, সময়ভেদে বাঙালি জাতির করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কোমলে-কঠোরে উচ্চারিত এই ভাষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের আলোকবর্তিকা। তার এ ভাষণই সেদিন সংশয়ে থাকা বাঙালির হৃদয়ে জাগিয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। এই ভাষণের পরপরই বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। মূলত এই ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা। তিনি বললেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুুত। বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু সেদিন নির্দেশ দিয়েছিলেন, আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’ ৭ মার্চের উত্তাল দিনটিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। ঢাকার এ পথ সে পথ ঘুরে; এ গলি সে গলি সব জায়গায় থেকে আসা সব মিছিলই এসে মিশে রেসকোর্স ময়দানের লাখো জনতার মোহনায়। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, দুপুরের অনেক আগেই ময়দানটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ আসে প্রাণের নেতার নির্দেশনার প্রত্যাশায়। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে লাখো লাখো মানুষ তখন নির্দেশের অপেক্ষায়, নেতার ঘোষণার আশায়। ঐতিহাসিক এই ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীর ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে শহীদদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্বলিত চার দফা দাবি উত্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু। এই জনসভায় মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যা শেষে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগমুহূর্তে দেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং গোটা জাতির বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের বুকে নতুন করে লেখা হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম। সেই দিনের সেই সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর চশমাটা সেদিন ডায়াসের উপর রেখে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানিদের প্রতি চার দফা শর্ত আরোপ করলেন অন্যদিকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বললেন। ভাতে মারার কথা বললেন, পানিতে মারার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সাতই মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। একজন তাঁকে বললেন, জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, তুমি তোমার কাজ কর। আমি তাঁদের নেতা, আমি তাঁদের পরিচালিত করবো, তারা আমাকে নয়।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরে ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের পর গোটা বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরিবর্তে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান শব্দ মুছে বাংলাদেশ লেখে। তিনি বলেন, এ ভাষণের পর গোটা দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় চলতে থাকে। এ ভাষণ গুটি কয়েক রাজাকার ছাড়া গোটা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতার প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণটি মঞ্চের সামনে থেকে তার শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন তিনি একটি পত্রিকার জন্য রিপোর্ট লিখতে সেখানে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত হওয়া শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাকে এমনভাবে নিয়ে আসা হয়, যেন জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন! তখন আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য তিনি কবিতাটি লেখার তাগিদ অনুভব করেন। কবি মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল একটি কবিতা। এই ভাষণটি কাব্যসমৃদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে মার্কিন সাপ্তাহিক ‘টাইমস’ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর ‘পয়েট অব পলিটিকস’ শিরোনামে একটি প্রচ্ছদ স্টোরি ছাপা হয়। এমনকি মার্কিনরাও এই ভাষণ স্টাডি করে তার মধ্যে কবিতার সন্ধান পেয়েছিল। ভাষণটি স্বয়ং একটি কবিতা হওয়ায় তা নিয়ে কবিরা খুব বেশি কোনো কবিতা লেখেননি। এই ভাষণে ১০৩টি লাইন আছে। ১৯ মিনিট দৈর্ঘ্য। ভাষণটি তিনি এমন চমৎকারভাবে দিয়েছিলেন, প্রথমেই ‘ভায়েরা আমার’ বলে যে সম্বোধন করলেন, মনে হলো, যেন হাজার বছরের বাঙালির যে ভালোবাসার তৃষ্ণা এবং যে প্রত্যয় নির্ভরতা, যার স্বপ্ন দেখেছে সে, সেই নেতা এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছেন। ১০ লাখ লোক একসঙ্গে লাফিয়ে উঠছিল। সব মানুষ যেন আনন্দে উত্তেজনায় একাকার। তাদের নেতার উপস্থিতিতে নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করছিল তারা। এটি একটি অবিস্মরণীয় ভাষণ। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু বাঙালি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান নয়। এটি সব জাতির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিকনির্দেশনা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। কর্মসূচি :দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও, এদিন বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগের সকল শাখা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণ করবে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।