হোলস্টাইন অর্থ সাদাকালো ডোরাকাটা আর স্থানের নাম ফ্রিসল্যান্ড এর সাথে মিলিয়ে এই গরুর নাম হয় হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান। বাভারিয়া (বর্তমান জার্মানি) এবং ফ্রিসল্যান্ড (বর্তমান নর্থ হল্যান্ড) এই গরুর আদি উৎস স্থান।
হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরুকে তাদের সাদা-কালো রঙের কারণে সহজেই চেনা যায়।
ফ্রিজিয়ান জাতের গরু মাংসের জন্য পালা হয় না। কিন্তু তারপরও বাজারে মাংসের সরবরাহের বিরাট অংশই ফ্রিজিয়ান গরুর। কারণ এটি আকারে বেশ বড়। বিশ্বে যত গরু পালন করা হয়, তার ৫০ শতাংশের বেশি ফ্রিজিয়ান জাতের।
একটা হোলস্টাইন জাতের পূর্ণ বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন ১১০০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং উচ্চতা ৫৫- ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।
ব্রাহমা গরু:
বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু রয়েছে তার প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা গরু।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা বীজ বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে।
বাংলাদেশে ক্রেতাদের কাছে ব্রাহমা জাতের গরু জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে প্রথম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রাহমা উৎপাদন কর্মসূচি শুরু করে।
শুরুতে ১১টি উপজেলায় তিন বছরের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও এখন প্রায় ৫০টির মত জেলায় চলছে এ কর্মসূচি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, ব্রাহমা গরু মূলত মাংসের জাত বলে পরিচিত।
দুধের জন্য এই গরুর তেমন খ্যাতি নেই।
ব্রাহমা গরু দেখতে অনেকটাই দেশি গরুর মতো, কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়। এই গরুর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মতো।
এর গায়ে চর্বি কম হয়, যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি। প্রাণী পুষ্টি ও জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহমা গরুর আদি নিবাস ছিল ভারতে।
সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজির বেশি হতে পারে, আর একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হবে ৫০০কেজি থেকে ১০০০ কেজি।
কোরবানির সময় বাজারে অস্বাভাবিক দাম হাঁকানো গরুগুলো মূলত এই ব্রাহমা জাতেরই গরু।
বাংলাদেশের কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।
সেগুলোর ফলাফল জানা গেলে আগামী দিনে এ জাতের গরুর উৎপাদন দেশে আরো বাড়বে।
মীরকাদিম:
মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম জাতের গরু দেখতে ধবধবে সাদা। কিছুটা লালচে আর আকর্ষণীয় বাঁকা শিং। বাজারে এই গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিশেষ করে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে। তবে চাহিদার তুলনায় এই জাতের গরুর সরবরাহ কমে গেছে।
এস এ সি এগ্রোর নির্বাহী পরিচালক মিরাজ আহমেদ বলেন এই গরুর দাম এক লক্ষ ২০ হাজার থেকে শুরু হয়ে আড়াই লক্ষ পর্যন্ত হয়। মীরকাদিমের গরুর মাংসে আঁশ কম থাকে, এর হাড় চিকন হয়। এই গরুর মাংস হয় নরম ও তেলতেলে।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে মীরকাদিম জাতের ভালো ষাঁড়ের সংকট আছে, যে কারণে এই জাতের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ধীরে হচ্ছে।
ভালো জাতের ষাঁড়ের বীজ নিয়ে এর সংকরায়নের চেষ্টা করছে সরকার।
রেড চিটাগং ক্যাটেল:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা অষ্টমুখী লাল গরু বা লাল বিরিষ সংক্ষেপে আরসিসি আমাদের দেশের অধিক পরিচিত একটি গরুর প্রজাতি।
রেড চিটাগাং ক্যাটেলের প্রধান চারণস্থল চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। এছাড়াও এটি কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে পাওয়া যায়। দেখতে লাল বর্ণের।
দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ সে.মি. এবং উচ্চতা প্রায় ২৪ সে.মি. হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কেজি হয়ে থাকে।
গরুর ওজনের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ খাদ্য উপযোগী মাংস।
খামারি মিরাজ আহমেদ বলেন,আরসিসি গরু দেখতে সুন্দর, কোরবানির হাটে সহজেই চোখে পরার মতো এই গরুর প্রজাতি।
তবে, গরুর এই বিশেষ প্রজাতি জনপ্রিয় হওয়ার এক বিশেষ কারণ হল, এর মাংস খুবই সুস্বাদু। (সূত্র : বিবিসি)