খুচরা বাজারে আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল

খুচরা বাজারে আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল

বিশ্ববাজারে ব্যাপক দরপতনের পর এবার দেশে বাজারে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে যথারীতি এর উল্টো চিত্র। সোমবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও আগের দামেই তেল কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। বরাবরের মতো এবারও বেশি দামে তেল কেনার অজুহাত দিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। অন্যদিকে গত রোববার থেকে দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে আমদানিকৃত আদার দাম কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। এর আগে রোববার রাতে খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে গত আড়াই মাসের মধ্যে চতুর্থ দফায় পরিবর্তিত হয়েছে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। চলতি বছরের শুরু থেকেই ভোজ্যতেলের উচ্চ মূল্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিতে তেলের ব্যবহার কমাতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। দেখা যায়, প্রতিবারই বিশ্ববাজারের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, কিন্তু দাম কমলে তা দেশের বাজারে কার্যকর হতে সময় লাগে অন্তত ২-৩ সপ্তাহ। সর্বশেষ ঈদের আগে ২০৫ টাকা থেকে কমে ১৯৯ টাকা লিটার নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ কার্যকর হয়েছে ঈদের পর। তবে দাম বাড়ানো হলে বা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে তৈরি হওয়ার আগেই কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার, পাড়া-মহলস্নার দোকানে আগের অর্থাৎ ১৯৯ টাকা দরেই বিক্রেতাদের ভোজ্যতেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহের আগে ও পরে যদি এভাবে দাম বাড়ানো-কমানো হয়, তাহলে তাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ে যান। কল্যাণপুর নতুন বাজারের তেল বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন জানান, খোলা সয়াবিন নতুন দামে বিক্রি করা গেলেও বোতলজাত তেল এই দামে বিক্রি করতে অন্তত আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ১৯৯ টাকা লিটার হিসাবে প্রায় আড়াই লাখ টাকার অর্ডার দিয়েছি। অর্ধেক ঈদের আগে এবং গত সপ্তাহে বাকি তেলের সরবরাহ পেয়েছি। এখন নতুন দামে এই তেল বিক্রি করলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হ্ে‌ব।’ এদিকে পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার তেলে দাম কমেছে প্রায় ৩৫ টাকা, কিন্তু খুচরা বাজারে কমেছে মাত্র ১৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন তেলের বাজারদর এই অবস্থায় স্থির থাকলে খুচরা পর্যায়ে আরও ৫-৭ টাকা দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, পাইকারি বাজারে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি মণ সয়াবিনে ৭০০ এবং পাম অয়েলে দেড় হাজার টাকা দাম কমেছে। সেই হিসাবে ঈদের আগেই দাম কামনো যেত। কিন্তু তা না করে দুই দফায় ৬ এবং ১৪ টাকা কমানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেক বিক্রেতা। অন্যদিকে বিশ্ববাজরে চাহিদার পতনে এক মাসের ব্যবধানে সয়াবিনের বুকিং রেট প্রতি মেট্রিক টনে ৬০০ ডলারের মতো কমে গেছে। পাম অয়েলের ক্ষেত্রে তা কমেছে প্রায় দেড় হাজার ডলার। এদিকে রাজধানীসহ দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আদার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ঈদের পরও প্রতিকেজি আদা ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও সোমবার বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকা দরে। ফলে আদা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের বাজার চাহিদা বিবেচনায় আদা আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময় কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা না হওয়ায় অবিক্রীত থেকে যায় বেশির ভাগ পণ্য। তাই নষ্ট হওয়ার ভয়ে ৬৫ টাকা দরে প্রতি কেজি আমদানিকৃত আদা ২০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। সোমবার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা দোকানে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। যদিও এই বাজারের প্রায় ৭০ ভাগ আদাই আসে খাতুনগঞ্জ থেকে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগেই তারা আদা সংগ্রহ করেছেন, তা এখনো বিক্রি হয়েছে। তবে খাতুনগঞ্জে দাম কম হওয়ার কারণে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আদার সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, তখন প্রতি কেজি ৫০ টাকার নিচে নেমে যেতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য