খুলনা প্রতিনিধি
মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন খুলনা মহানগরীর বাসিন্দারা। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে। ধোঁয়াযুক্ত কয়েল জ্বালিয়ে বা ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট প্রতি বছর বৃদ্ধি পেলেও এর সুফল নগরবাসী পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত এক মাস ধরে নগরীতে মশার উপদ্রব অস্বাভাবিক বেড়েছে। মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে নগরবাসী আগে যেখানে সন্ধ্যার আগে-ভাগে দরজা-জানালা বন্ধ করতেন এখন তারা দিনের বেলায়ও প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খুলছেন না।
জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কেসিসির বাজেটে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও মশক নিধনের জন্য কঞ্জারভেন্সি খাতে ১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০২০-২১ অর্থছরে ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহসীন জানান, মশক নিধনে ব্যয় বাড়লেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। মশার উপদ্রব ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে খুলনায় ডেঙ্গু রোগীও শনাক্ত হয়েছে। যা নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। শিশু, বয়স্কদের পাশাপাশি মশার কামড়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। গোবরচাকা, সোনাডাঙ্গা, শেখপাড়া নবপল্লী, টুটপাড়া আমতলা, মহিরবাড়ি খালপাড়, মোল্লাপাড়া, বাগমারা লবণচরাসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। কেসিসির সহকারী কঞ্জারভেন্সি অফিসার নুরুন্নাহার এ্যানি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন স্প্রে ম্যান মশক নিধনে লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ ও কালো তেল প্রয়োগ করছে। পর্যায়ক্রমে ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায়ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশক নিধনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই বেলা সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে কোনো মশক নিধন কর্মীর দেখা না পেলেও কোনো এলাকায় দুপুরের দিকে নিধন কর্মীদের ফগিং মেশিন নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়।
কেসিসি কঞ্জারভেন্সি শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনায় বিভিন্ন সড়কে ও ড্রেনে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ড্রেনের পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় বদ্ধ পানিতে মশা বংশবিস্তার করছে। জনসংখ্যা ও এলাকা অনুপাতে মশক নিধনে জনবলও অত্যন্ত সীমিত। কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ জানান, মশক নিধন কাজ জোরদার করতে পূর্বের তুলনায় জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে ৩১টি ওয়ার্ডে ৭৫ জন কর্মী মশক নিধনে কাজ করছেন। মশা নিধনে প্রতিনিয়ত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় মশা একটু বৃদ্ধি পায়। এদিকে মশা নিধনে ছিটানো ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত ও সংশ্লিষ্টদের কাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।