আগামী জুলাইয়ে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে, একই সঙ্গে কমে আসবে মূল্যস্ফীতির চাপও। তবে পণ্য আমদানিতে অব্যাহত নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং জ্বালানি ঘাটতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আসবে ৬.২ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ভালো।
চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৫.২ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চলতি ও আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৭.৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। এতে নতুন অর্থবছরে যোগাযোগ ও জ্বালানি অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হবে।
যার প্রতিফলন দেখা যাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপও কমে আসবে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কর্মসংস্থানে উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের প্রকৃত উপার্জন এখনো করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফেরেনি।
দেশগুলোকে দারিদ্র্য দূরীকরণে কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দারিদ্র্য দূরীকরণের নিশ্চিত পথ হচ্ছে কর্মসংস্থান তৈরি।
মন্থর প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান তৈরি অনেক কঠিন করে তোলে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের গন্তব্য নয়। আমাদের জোয়ার ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে, তবে এ জন্য অবশ্যই সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের জন্য একটি ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই ঋণ নেওয়ার পেছনে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসা।
আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়া ও বিনিময় হারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশসহ নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। এর ফলে এসব দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তবে এখন আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ কারণে এসব দেশে আমদানি নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হচ্ছে।
আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেশ কিছু খাদ্যপণ্য রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। তা সত্ত্বেও এসব দেশ বিদ্যমান খাদ্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে।
সংস্থা জানায়, উচ্চ মাত্রায় খেলাপি ঋণ, পুঁজির ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের দুর্বলতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক খাতে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এসব দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে করপোরেট খাতে সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজির সংকটও আর্থিক খাতে ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।
এ ছাড়া বেশি পরিমাণে সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং আর্থ-সামাজিক উত্তেজনা ইত্যাদি কারণে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে আর্থিক সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব সংকট শেষ পর্যন্ত দেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে আর্থিক নীতির কঠোরতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা আরোপিত থাকায় অর্থনীতিতে তার সুফল পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বব্যাংক আশা করছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আর্থিক একীকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস আগের চেয়ে কিছুটা বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থা জানিয়েছিল, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ১.৭ শতাংশ। এখন বলছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২.১ শতাংশ হতে পারে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৩ সালে ৫.৯ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে তা আরো কমে ৫.১ শতাংশ হতে পারে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ভারতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশ হবে। এটি গত জানুয়ারিতে করা পূর্বাভাসের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কম।