আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। চ্যালেঞ্জের এই নির্বাচনে আসনের গুরুত্ব বুঝে নৌকার মাঝি নির্ধারণ করবে ক্ষমতাসীনরা। এজন্য দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতিটি আসন ধরে জরিপের কাজ করছে। নির্বাচনের আগে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে আগস্ট শেষে তৃণমূলে ফের সফর শুরু করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে সরকারের করা উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি নৌকায় সমর্থন চাইবেন তিনি।
এছাড়াও ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল গঠনে আগস্টের পর ধারাবাহিক সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলছে- নির্বাচনের খুব বেশি সময় নেই। আসনের গুরুত্ব বুঝে দলীয় প্রতিকের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ নেই। ভোটের মাঠে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে বিশেষ কিছু আসনকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তথ্যমতে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। জাতীয় নির্বাচনে আসন বুঝে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিতর্কিতদের ঝেরে ফেলে জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ও তৃণমূল নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় এমন বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান। দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে নৌকার জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ জরিপের কাজও শুরু করেছে দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, টানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে প্রতিটি আসনেই শক্তিশালী, জনপ্রিয় এবং বিতর্কমুক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোন কোন আসনে জোটের প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তারও গোপন জরিপ চালানো হচ্ছে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে। তবে টানা তিন মেয়াদে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন, কোন্দল-দ্বন্দ্বে জড়িত মন্ত্রী-এমপিদের অনেকের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবার নতুন মুখ দেখা যেতে পারে প্রায় শতাধিক আসনে। বিশেষ করে প্রতিটি জেলা সদরের আসনগুলোকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
মূলত জেলা রাজনীতির প্রাণ সদর আসন। সদর আসন নিয়ন্ত্রণে থাকলে পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে দলটির পক্ষে থেকে। ফলে জেলা আসনগুলোতে বিতর্কমুক্ত ও প্রভাবশালী প্রার্থী রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও বেশকিছু আসনে সাংগঠনিক ভীত শক্ত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার রাজত্ব করলেও নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি স্থানীয় এমপিরা। সুসম্পর্ক গড়তে পারেনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে। দুর্বল এসব আসন ও এমপিদের চিহ্নিত করতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে দলীয় প্রার্থীর বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। যা গোপন জরিপের কাজ করছে স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনের আগে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে আগস্ট শেষে তৃণমূলে ফের সফর শুরু করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দলীয় জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন তিনি। ওই সফরের মাধ্যমে সরকারের করা উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি নৌকায় সমর্থন চাইবেন দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে। বিশেষ করে দল যাকে মনোনয়ন দিবে- দলমত শেষে সবাই যেন তার পক্ষে কাজ করেন। সেই বার্তাই পৌঁছে দেবেন আওয়ামী লীগপ্রধান। নির্বাচনের মাঠে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল গঠনে লক্ষ্যেই আগস্টের পর ধারাবাহিক সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সাংগঠনিক সফরের মধ্যদিয়ে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আশার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবেন তারা।
এছাড়াও ভোট ও মাঠের রাজনীতিতে দলের কোথায় কোথায় দুর্বলতা রয়েছে- সেগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য কাজ করবেন তারা। যদিও সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশগুলোতে যোগ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বিভাগ অনুযায়ী বার্তা দিয়েছেন তিনি। সমাবেশে আওয়ামী সরকারের টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তারা ভোটারদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে দলীয় প্রধানের সাংগঠনিক সফর নেতাকর্মীরা চাঙ্গা করবে এবং তৃণমূলে দল হবে শক্তিশালী।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের খুব বেশি সময় নেই। নির্বাচন সামনে রেখে আসন ধরে ধরে জরিপ চলছে। আসনের গুরুত্ব বুঝে দলীয় প্রতিকের মনোনয়ন দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনকে গুরুত্ব দেয়। ক্লিন ইমেজ, পরিছন্ন, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, নির্বাচনে জয়লাভ করে আসতে পারবেÑ এমন প্রার্থীদেরই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দল হিসেবে সবসময়ই নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি থাকে। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি যত কথাই বলুক না কেন, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা নির্বাচনে আসবে। অংশগ্রহণমূলক ও জনগণের জনমত প্রতিফলিত হোক এমন নির্বাচনই আমরা চাই।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোন দল নির্বাচনে না এলে তো নির্বাচন বসে থাকবে না। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি এবং আমাদের দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছি