চীনকে কোণঠাসা করতে যে কোনো মূল্যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি ও প্রভাব নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এমন কঠোর বাস্তবতার নিরিখে আগামীকাল বুধবার ও এর পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দশম প্রতিরক্ষা সংলাপ। বৈঠকে ঢাকা কীভাবে অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইতে পারে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সংলাপে যোগ দিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জে জেমসের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) অপারেশন ও পরিকল্পনা অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রাহমান।
বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস), প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ), অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (এসিএসএ), আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, দুর্যোগ মোকাবিলা, শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রশিক্ষণ, দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের সফর বিনিময়, জঙ্গিবাদ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চীনকে কোণঠাসা করতে অবাধ, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অগ্রাধিকার। তারা যে কোনো মূল্যে এ অঞ্চলে নিজ উপস্থিতি ও প্রভাব নিশ্চিত করতে চায়। এ উপস্থিতি নিশ্চিতে আইপিএসে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তাদের অন্যতম উপাদান।
তিনি বলেন, আইপিএস নিয়ে আলোচনায় ওয়াশিংটন থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়টি জোর দেয়া হবে। কারণ, এটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অগ্রাধিকার। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে গত শনিবার এক বার্তায় নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি বলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মতো সংকটপূর্ণ অঞ্চলে আমাদের উপস্থিতি বাড়ানো হবে। আগ্রাসন মোকাবিলা করতে এবং বিশ্বজুড়ে মানবিক সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র নজিরবিহীন জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপের নবম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ ও প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, সমরাস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনুযায়ী দাম, মান ও কৌশলগত দিক বিবেচনা করে সংগ্রহ করা হবে। প্রতিরক্ষা চুক্তি দুটির একটি জিএসওএমআইএর বিষয়ে বাংলাদেশ রাজি। তবে এখন চুক্তিটি নিয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে ঢাকা।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিএসওএমআইএ ও এসিএসএ চুক্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এ ছাড়া সামরিক সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি রয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে। এ ছাড়া মালদ্বীপের সঙ্গে ২০২০ সালে সামরিক চুক্তি করেছে দেশটি।