দেশের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ ঢাকায় বসবাস করছে এবং প্রতি বছর নগরীতে নতুন ৫ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। শহরমুখী মানুষের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫১ সাল নাগাদ মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করবে। অধিক মানুষ শহরমুখী হওয়ায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে প্রতিনিয়ত গৃহহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বর্জ্য বৃদ্ধি, পানি ও বায়ুদূষণ, বৃক্ষনিধন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্য সংকটের শিকার হতে হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশের টেকসই নগরায়ণ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, দেশের মোট আয়তনের এক শতাংশ (এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার) ভূমি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকা গঠিত। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ ঢাকায় বাস করে এবং উদ্বেগজনকভাবে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে ঢাকায় সবুজের পরিমাণ কমছে। শহরে ২৫ শতাংশ সবুজের প্রয়োজন হলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৮ শতাংশ। সবুজ সুরক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছরে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৭ লাখের বেশি মানুষের শহরে আগমন ঘটতে পারে। যার বড় অংশ ঢাকায় আশ্রয় নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় এক কোটির ওপর বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে অন্তত ৭৫ লাখ ঢাকায় আশ্রয় নেবে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে না পারলে এসব মানুষের আগমন রোধ করা যাবে না।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক, এটাই বাস্তবতা। তবে এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরকার ঢাকার বাইরেও অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন করেছে। এর সুফল দেশবাসী সহসাই দেখতে পাবে। ঢাকার উপশহরগুলোকে আরও উপযোগী করার জন্য সরকার নিরসলভাবে কাজ করছে। মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ আরও ১০-১৫ বছর চলমান থাকবে। এতে যানজট কমবে এবং নগরবাসী উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা উপভোগ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, সিটি জরিপে কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে ডিজিটাল সার্ভে গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি, যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হলে দেশবাসী আধুনিক সেবা সুবিধা পাবেন। ভূমিমন্ত্রী বলেন, তিন ফসলি জমিতে কোনো শিল্প-কারখানা করতে দেওয়া হবে না। কারণ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দুই ফসলি জমিতেও শিল্প-কারখানা স্থাপন না করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ড্যাপের পুরোপুরি সংশোধন না করে, ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি না করা হয়, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। নতুন আয়কর আইনে ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশনে করারোপের কারণে জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি বেশ কমে গেছে। এ বিষয়ে এনবিআর কাজ করছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রাম উন্নয়নে শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, জীবনযাপনে সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিস্তার করতে হবে। যেন গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে সক্ষম হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের জলবায়ু, নদী মারাত্মকভাবে দূষণ করছে। এক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। অবকাঠমো উন্নয়নে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে নগরায়ণ এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে জিডিপির ৬৫ শতাংশ আসছে শহরাঞ্চল হতে। ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণের ফলে একদিকে যানজট, পানি দূষণ, বায়ু দূষণের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে জ্বালানি খরচ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ অবস্থায় ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ করা সময়ের দাবি। তার মতে, টেকসই নগরায়ণ ও শহর বিকেন্দ্রীকরণে সুশাসন, পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নে