কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের পদত্যাগ ও পদত্যাগের গুঞ্জনকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে ব্যাংকিং খাতে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সাথে বনিবনা না হওয়া, ব্যাংকের স্বার্থে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় কিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাথে পরিচালক পর্ষদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ নিয়েই কিছু ব্যাংকের এমডি চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমস্যায় পড়া এমডিদের সাথে আলাদা বৈঠক করে আশ্বস্ত করা হচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, নানা সময়ে ব্যাংকের পরিচালকদের দ্বারা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অতীতে ন্যাশন্যাল ব্যাংকের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হওয়ায় নানা সময়ে ব্যাংকটি থেকে এমডিদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। সম্প্রতি এর শিকার হয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি। সমস্যাকবলিত ফার্মাস ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক নাম ধারণ করা ব্যাংকটির এমডি তারেক রিয়াজ খান পদত্যাগ করেন। গত বছর মার্চ থেকে নিয়োগ পাওয়া তারেক রিয়াজ খানের চাকরি মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদের ১৯ মাস আগেই তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছেন। এরপর আরো কয়েকটি ব্যাংকের এমডির পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। এতেই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত দুই দিনে পদত্যাগ করা পদ্মা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠা আরো কয়েকজনের সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। গতকালও তৃতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বৈঠকগুলোতে এমডিদের চাকরির সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আশ্বাস দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাজ হলো আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের নীতিমালা দেয়া। আর সেটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব হলো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যার নেতৃত্বে থাকেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটছে। যেমন, নিজেদের নামে-বেনামে ঋণ নেয়া, অবৈধভাবে সুদ মওকুফ করে নেয়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ডাউন পেমেন্ট না দিয়েই ঋণ নিয়মিত করা, ব্যাংকের নামে বাড়তি দামে জমি কিনে কমিশন খাওয়াসহ নানা অনিয়ম পরিপালন করতে অনেক সময় এমডিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় চেয়ারম্যান ও পর্ষদ থেকে। এসব অনৈতিক চাপে নতি শিকার না করলেই নানা হয়রানির শিকার হতে হয় ব্যাংকারদের। এমন অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। আবার অনেক সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান সারা দিন ব্যাংকারদের মতো অফিস করে ব্যাংকারদের ওপর নানা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করারও নজির রয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে অনেকেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আবার অনেকেই চাকরি রক্ষার্থে নীরবে এ অনৈতিক কার্যক্রম মেনে নেন। তারা পর্ষদকে নানাভাবে নৈতিক সুবিধা দেন। ব্যাংক থেকে জনগণের আমানতের শত শত কোটি টাকা পানির মতো বের করে দিতে সহযোগিতা করেন। আবার অনেকেই চাপ সামলাতে না পেরে আবার স্বেচ্ছায় পদত্যাগও করেন। যেমন নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংক যেমন মেঘনার শুরুর দিকে ব্যাংকিং খাতের অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ব্যাংকার নুরুল আমিন পদত্যাগ করেছেন।
সম্প্রতি পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ করা নিয়ে ব্যাংকিং খাতে অনেকটা অস্থির হয়ে ওঠে। পদ্মা ব্যাংকের এমডির মতো আরো কয়েকটি ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করতে পারেন এমন গুঞ্জন ওঠে। পর্ষদে বাগবিতণ্ডা হওয়ায় এমডি পদত্যাগ করতে সিদ্ধান্ত নেন পরে নানা চাপে আবারে বলেন, আমি পদত্যাগ করিনি। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ ধরনের সমস্য্যায় থাকা এমডিদের সাথে বৈঠক করে চাকরি সুরক্ষা দেয়ার আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর মুরুব্বি হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তাদের চাকরি সুরক্ষা না দিলে জনগণের সম্পদ সুরক্ষা করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ওই এমডি।