ধেয়ে আসছে ফনি, ৮ লাখ লোককে সরিয়ে নিচ্ছে ভারত

ভারতের পূর্ব উপকূল থেকে আট লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাস, নৌকা ও ট্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রলয়ংকরী শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ফনির তাণ্ডব থেকে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে দেশটির সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আঘাত হানতে পারে অতিপ্রবল এই ঝড়টি।

ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উড়িষ্যার নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ৮৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সব মিলিয়ে আট লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা হয়েছে।

ইতিমধ্যে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।। উড়িষ্যা, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উড়িষ্যার বিশেষ ত্রাণ কর্মকর্তা ভিষুপাড়া সেঠি বলেন, এ সময়ে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। এছাড়া পর্যটকদের উপকূলীয় শহর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গা ছাড়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

ভারতীয় কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য জাহাজ ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সতর্ক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করছি আমরা।

মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের। জরুরি ত্রাণ সহায়তার জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফনি সোয়া তিনশ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় ভারতের পারাদ্বীপ ও বিশাখাপত্তম বন্দরের কর্মকাণ্ড বুধবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শতাধিক ট্রেনের সূচি।

দেশটির জাতীয় নির্বাচনের এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় ফনি হাজির হওয়া নিয়ে উড়িষ্যা রাজ্যের ১১টি উপকূলীয় জেলা থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে, ফনির প্রভাবে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। উড়িষ্যার উপকূলীয় অঞ্চলে কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিলিমিটার ছাড়াতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

এটি বৃহস্পাতিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে হয়ে শুক্রবার মে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।

‘ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’

তিনি বলেন, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

‘উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতেহ ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক জাতীয় শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ