দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। প্রতিষ্ঠানটির বাজেট প্রস্তাবের আলোচনার এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন বিআইএর প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বিআইএর নিজস্ব অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন- বিআইএ’র সহ-সভাপতি রুবিনা হামিদ ও মনিরুল ইসলাম। কার্যনির্বাহী সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, জামাল এ নাসের, নাসির উদ্দিন পাভেল, ফারজানা চৌধুরী, আদিবা সুলতানা প্রমুখ।
নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট উপলক্ষ্যে বিমা খাতের জন্য নয় দফা দাবি জানিয়েছে বিমা মলিক ও নির্বাহীদের এই সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে বিমা খাতের দাবিগুলো তুলে ধরেন বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।
তিনি বলেন, লাইফ এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে বেকারত্ব নিরসন, বিনিয়োগ, শেয়ার বাজার, সম্পদ পুঞ্জিভূতকরণ, সরকারি কোষাগারে কর প্রদান এবং অর্থ একত্রিকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। আমরা মনে করি এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে আমাদের এ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
বাজেটে বিমা খাতের দাবিগুলো- পুনঃবিমা কমিশনের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে যে উৎসে মূল্য সংযোজন কর আদায় করা হয়, তা থেকে অব্যাহতি দেয়া। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, পুনঃবিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর মুসক প্রযোজ্য নয়। বিমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের নিকট থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করে। যেহেতু একই বিষয়ের ওপরে ভ্যাট প্রদান করা হয়েছে, পুনরায় একই বিষয়ে ভ্যাট প্রদান করা হলে তা দ্বৈত করের সামিল হবে।
নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র স্বাস্থ্য বিমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা।এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, লাইফ ইন্স্যুরেন্সগুলো (জীবন বিমা) হেলথ্ ইন্স্যুরেন্স কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদেরকে এই পলিসির জন্য ভ্যাট দিতে হয় না। পক্ষান্তরে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করে থাকে। যার ফলে হেলথ্ পলিসির মূল্য হার বেশি হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির হেলথ্ পলিসি সমূহ জনপ্রিয়তা অর্জনে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। হেলথ্ পলিসির ওপর থেকে ভ্যাট মওকুফ করা হলে অনেক গ্রাহকই হেলথ্ পলিসির আওতায় আসবে।
জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কর্তন বন্ধ করা। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করার ফলে দেশের সকল লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র পলিসি হোল্ডারদের সংখ্যা কমে গেছে। গ্রাম-গঞ্জের ক্ষুদ্র পলিসি হোল্ডারদের ঝুঁকির বিষয় মুনাফার সম্বন্ধে সুবিধার কথা বুঝিয়ে তারপর পলিসি বিক্রি করা হয়। ক্ষুদ্র পলিসি হোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্সের যে বিধান চালু করা হয়েছে তা যদি উঠিয়ে নেয়া না হয় তাহলে দেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে।
বিমা এজেন্টদের উৎসে কর থেকে অব্যাহতি দেয়া। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বীমা এজেন্টদের কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করার বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে, বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ প্রেক্ষিতে বিমা শিল্পে কর্মরত স্বল্প আয়ের এজেন্টদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ন্যায় ন্যূনতম করমুক্ত আয় সীমা পর্যন্ত উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত।
পুনঃবিমা প্রিমিয়ামের ওপর উৎসে কর রহিত করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বর্তমানে বিমা কোম্পানিগুলো পুনঃবিমা প্রিমিয়াম পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন সম্পর্কিত অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। পুনঃবিমার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপিত হলে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে এবং এই শিল্পে একটি সংকটময় পরিস্থিতি উদ্ভব হবে। যার ফলশ্রুতিতে কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফা হতে বঞ্চিত হইবে এবং সরকারও রাজস্ব হতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কর্পোরেট কর হারহ্রাস করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম। তাই বিমা কোম্পানির কর্পোরেট কর হার কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা প্রয়োজন।
কৃষি বিমার ওপর থেকে কর রহিত করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, জলবায়ু পবির্তনের কারণে এই খাত ক্রমাগত বিপন্ন হচ্ছে, যার ফলে কৃষকরা কৃষি কাজে অনিহা প্রকাশ করছে। তাই কৃষকদের জন্য কৃষি বিমা অপরিহার্য্য। কৃষি বিমা উন্নয়নে কৃষি বিমা প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং কৃষি বিমা থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর কর্পোরেট কর হার রহিত করা প্রয়োজন।
অনলাইন ভিত্তিক বিমার প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর রহিত করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, ভিশন ২০২০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে বিমা খাত অনলাইন পলিসি ইস্যু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ বিমা সেবা দেবার পথকে সুগম করবে। আইসিটি কোম্পানিগুলোর মত অনলাইন ভিত্তিক পলিসির প্রিমিয়াম থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর কর্পোরেট কর রহিত করা হলে গ্রাহকরা উৎসাহিত হয়ে বিমা সেবা গ্রহণ করবে।
নতুন সামাজিক পণ্যে ট্যাক্স এবং ভ্যাট ছাড়। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক বীমা পণ্য এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিমা ম্যাক্রো অর্থনীতির উন্নয়নে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের জীবনযাত্রার মানের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সামাজিক জীবন যাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে বিমা শিল্পের আওতায় আনতে যে বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন তার জন্য বিমা কোম্পানিগুলোকে এবং গ্রাহকদেরকে কর অবকাশের অথবা ক্যাশ ইনসেনটিভের সুযোগ দেয়া উচিত।