ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে দেবে এআই

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে দেবে এআই

 

অনলাইন ডেস্ক

বিজ্ঞাপন জগতে বিপ্লব আনতে যাচ্ছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। আগামী বছরের শেষ নাগাদ বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন তৈরি ও লক্ষ্য নির্ধারণের সুযোগ চালু করবে এই কোম্পানি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য জানিয়েছে।

মেটার এই পদক্ষেপ বিজ্ঞাপন ও মিডিয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ, এই নতুন প্রযুক্তি সরাসরি ব্র্যান্ডগুলোর বিপণন বাজেটকে টার্গেট করবে, যা বর্তমানে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপনদাতা একটি পণ্যের ছবি ও নির্দিষ্ট বাজেট দিলে মেটার এআই সেই তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন তৈরি করবে, যাতে ছবি, ভিডিও ও লেখা থাকবে। এরপর ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে কোন ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে তা দেখানো হবে, তা নির্ধারণ করবে এমনকি বাজেটের ব্যবহারও নিজে থেকেই সাজিয়ে দেবে।

এখন পর্যন্ত মেটার বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মে কিছু প্রাথমিক এআই টুল রয়েছে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রদর্শনের আগে বিদ্যমান বিজ্ঞাপন কিছুটা পরিবর্তন করতে পারেন। তবে নতুন এই টুলসগুলো বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য ছবি, ভিডিও, লেখা ও লক্ষ্য নির্ধারণ—সবকিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করবে।

একই সঙ্গে জিওলোকেশন বা ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণের সুযোগ থাকবে। যেমন: কোনো ভ্রমণ কোম্পানি ছুটি অনুযায়ী কোনো বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে মেটার এআই টুল বিজ্ঞাপনটিকে এমনভাবে তৈরি করবে, যাতে তা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে তাদের সম্ভাব্য ভ্রমণ গন্তব্য অনুযায়ী মানিয়ে যায়।

প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞাপন বাজারে বিজ্ঞাপনদাতাদের আকৃষ্ট করতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে এআই ও মেশিন লার্নিংয়ে বিনিয়োগ বাড়ছে। মেটার পাশাপাশি স্ন্যাপচ্যাট পিন্টারেস্ট ও রেডিট এমন প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে।

এআই প্রযুক্তির এই বিপ্লবী পরিবর্তনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিশ্ববিখ্যাত বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংস্থার শেয়ারমূল্য হ্রাস পায়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন সংস্থা ডব্লিউপিপির শেয়ার ৩ শতাংশ কমে যায়, ফ্রান্সের পাবলিসিস গ্রুপ ও হাভাসের শেয়ার যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৩ শতাংশ কমে যায়।

এদিকে এই খবরের পর মেটার শেয়ার বেড়েছে ১ শতাংশ।

মার্ক জাকারবার্গ এই প্রযুক্তিকে ‘বিজ্ঞাপনের শ্রেণিবিন্যাসের নতুন সংজ্ঞা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে মেটা তাদের ২০২৫ সালের খরচ পরিকল্পনা হালনাগাদ করে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ৬৪ বিলিয়ন থেকে ৭২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত মূলধনী ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে, যার বড় একটি অংশ এআই অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় হবে।

তবে, মেটার দাবি, এটি বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোকে বাদ দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নয়।

মেটার চিফ মার্কেটিং অফিসার ও অ্যানালাইটিকস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স শুলৎজ বলেন, ‘আমরা এজেন্সিগুলোর ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি। এআই এমন একটি উপায়, যার মাধ্যমে এজেন্সি ও বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের সৃজনশীলতায় আরও বেশি সময় ও সম্পদ ব্যয় করতে পারবে। যদিও বিজ্ঞাপনে স্বয়ংক্রিয়তা বাড়বে, তবু বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পরিমাপের ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলোর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

তবে তিনি আরএ বলেন, ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর জন্য এআই একটি সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে।

শুলৎজ আরও বলেন, ‘মেটা প্ল্যাটফর্মে কোটি কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসা নির্ভরশীল, যারা কোনো এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতে পারে না বা দিনের ব্যস্ত সময়ে তাদের সৃজনশীলতা ও লক্ষ্য নির্ধারণ নিয়ে ভাবার সময় পায় না, তাদের জন্য এআই একটি সমাধান এনে দেবে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

তথ্য প্রুযুক্তি শীর্ষ সংবাদ