অসময়ের বৃষ্টিতে জয়পুরহাটে আমন ধান, আলু ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি

অসময়ের বৃষ্টিতে জয়পুরহাটে আমন ধান, আলু ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি

জেলা প্রতিনিধি

জয়পুরহাট, ২৯ অক্টোবর ২০২৫: অসময়ের লাগাতার বৃষ্টিতে জয়পুরহাট জেলাজুড়ে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিন দিন ধরে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টিতে আমন ধান, আগাম আলু, পেঁয়াজ ও বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে জেলার কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলাজুড়ে মোট ৪৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ৩৩৭ হেক্টর, শাকসবজি ২৭ হেক্টর, পেঁয়াজ (কন্দ) ১৩ হেক্টর, মরিচ ৭ দশমিক ৫ হেক্টর এবং আগাম আলু ৮৫ হেক্টর জমিতে ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলায় আমন ধান, শাকসবজি, পেঁয়াজ ও মরিচের ক্ষতি বেশি হলেও আক্কেলপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম আলুর ক্ষেত।

মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ নুয়ে পড়েছে এবং বহু জায়গায় পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। কিছু কৃষক বাধ্য হয়ে হেলে পড়া ধান আগেভাগেই কেটে নিচ্ছেন, অন্যদিকে আগাম আলু ও পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে বীজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকি গ্রামের কৃষক আব্দুল বাকি জানান, তিনি ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে স্টিক ও ক্যারেজ জাতের আলু বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি তা তুলে নিচ্ছেন। একই এলাকার কৃষক মশিউর রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধান পাকতে শুরু করেছিল, শ্রমিক ঠিক করা হলেও বৃষ্টিতে ধানগাছ হেলে পড়ায় তা কাটতে বিলম্ব হচ্ছে। জমিতে পানি জমে থাকায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের কৃষক হাফিজার জানান, দেড় বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছিলেন, কিন্তু এখন তা পানিতে ডুবে গেছে। তিনি বলেন, “রোদ না উঠলে একটাও গাছ বাঁচবে না। আগের লোকসান কাটাতে এবার আলু দিয়েছিলাম, এখন সব শেষ।”

একইভাবে আক্কেলপুরের আওয়ালগাড়ী এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে আগাম আলু রোপণ করলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে জমি তলিয়ে গেছে। তাঁর মতে, বছরের এই সময়ে এমন বৃষ্টি আগে কখনো দেখা যায়নি। এছাড়া রসুন ও পেঁয়াজের বীজও পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ.কে.এম. সাদিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে শুক্রবারে ২০ মিলিমিটার, শনিবারে ৬৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং রোববারে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অসময়ের এই বৃষ্টিতে রোপা আমন, আগাম আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, আবহাওয়া দ্রুত অনুকূলে না এলে আমন ধান ও আগাম আলু—এই দুই প্রধান ফসলে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কা তৈরি হবে। জেলার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এ ক্ষতির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে অনুভব করতে পারে।

সারাদেশ