আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজার বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ভেরিফাইয়ের পর্যালোচিত স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার এক হাজার ৫০০-এর বেশি ভবন ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ৮ নভেম্বর তোলা সর্বশেষ স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে যে আইডিএফের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু পাড়া ও মহল্লা এক মাসেরও কম সময়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংসের ধরন প্রাথমিকভাবে পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ বা বিস্ফোরণের মাধ্যমে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কিছু এলাকায় স্যাটেলাইট চিত্র না পাওয়ার কারণে বাস্তবে ধ্বংসের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
কিছু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের মতে, এই ধ্বংসযজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যদিকে, আইডিএফ-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন যে তাদের কার্যক্রম যুদ্ধবিরতির কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফার প্রস্তাবের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, বিবিসি ভেরিফাই-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই। তারা একটি চেঞ্জ ডিটেকশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে যুদ্ধবিরতির আগে ও পরে তোলা রাডার চিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। এতে দৃশ্যমানভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো গণনা করা হয়েছে।
এই বিশ্লেষণ মূলত ‘ইয়েলো লাইন’-এর পেছনের এলাকায় ফোকাস করেছে। ইয়েলো লাইন গাজার উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্ত জুড়ে বিস্তৃত একটি সীমারেখা, যেখানে অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হঠার কথা ছিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত অনেক ভবন যুদ্ধবিরতির আগে অক্ষত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চলীয় আবাসান আল-কাবিরা এলাকার বাসস্থানগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে।
আবাসান আল-কাবিরার সাবেক বাসিন্দা লানা খালিল, যিনি বর্তমানে আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছেন, জানিয়েছেন, “আমাদের বাড়িটা ছিল এক টুকরো স্বর্গ, চারপাশে ছিল খামার আর সবজি ক্ষেত। এখন সব ধ্বংস। ইসরায়েলি সেনারা কিছুই রেখে যায়নি। আমাদের ঘরবাড়ি সব উড়িয়ে দিয়েছে।”
রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় আল-বায়ুক এলাকায়ও একই রকম ধ্বংসের চিত্র দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতির আগে যেসব ভবন অক্ষত ছিল, সেগুলোও এখন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। নভেম্বরের শুরুতে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিশাল বিস্ফোরণের পর ধুলোর মেঘে ঢেকে গেছে পুরো এলাকা।
গাজা সিটি, শুজাইয়া এলাকা ও জাবালিয়া ক্যাম্পের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের কাছেও ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে।
ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা আইতান শামির বলেন, আইডিএফের এসব পদক্ষেপ যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ নয়। কারণ সেগুলো ‘ইয়েলো লাইন’-এর পেছনের এলাকায় হয়েছে, যা চুক্তির আওতার বাইরে বলে তিনি দাবি করেন।


