রপ্তানির তুলনায় আমদানি দ্রুত বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাব ঘাটতি বাড়ল

রপ্তানির তুলনায় আমদানি দ্রুত বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাব ঘাটতি বাড়ল

অর্থনীতি ডেস্ক

রপ্তানির তুলনায় দ্রুতগতিতে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবের ঋণাত্মক অবস্থার প্রবণতা দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ সময়কালীন বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ে এর চেয়ে বেশি, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ও টাকার মানে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশ থেকে এক হাজার ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার, ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৫৭১ কোটি ২০ লাখ ডলার। তুলনামূলকভাবে, গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত ছিল, তবে চলতি অর্থবছরে তা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঘাটতিতে পরিণত হয়েছে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের সময়ে ১৪৮ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল, যেখানে চলতি অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত রেকর্ড করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রমজান শুরু হওয়ায় আগে থেকেই এলসি খোলা হয়েছে। ফলে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চলতি হিসাব ও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।” তিনি আরও জানান, সব ধরনের আমদানি নেতিবাচক নয়; উৎপাদনমুখী কাঁচামাল আমদানি দেশীয় উৎপাদন ও পরবর্তীতে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ে ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

এদিকে, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এফডিআই এসেছে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। গত বছর একই সময়ে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ছিল ৫০ লাখ ডলার, যেখানে চলতি প্রান্তিকে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি দ্রুত বৃদ্ধি এবং চলতি হিসাবের ঋণাত্মক প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশীয় মুদ্রা মান ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়তে পারে।

অর্থ বাণিজ্য