নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) আওতাধীন ১৬টি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদে রদবদল করা হয়েছে। সিএমপির অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে লটারির মাধ্যমে এই পরিবর্তন আনা হয়। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব বণ্টনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ প্রশাসন।
সিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে থানাগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এটি লটারির মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়েছে। তাঁর মতে, এ ধরনের রদবদলে মাঠপর্যায়ের দায়িত্বসমূহ বণ্টনে সমতা নিশ্চিত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি থানার কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়। নির্বাচনকালীন সময়ের চাহিদা বিবেচনায় পুলিশ প্রশাসন ইতোমধ্যে নানামুখী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
রদবদল তালিকা অনুযায়ী, কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিমকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে পাঁচলাইশ থানায়। অন্যদিকে পাঁচলাইশ থানার ওসি সোলায়মানকে পাঠানো হয়েছে বাকলিয়া থানায়। বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বদলি হয়ে যাচ্ছেন কোতোয়ালি থানায়। সদরঘাট থানার ওসি আব্দুর রহিমকে স্থানান্তর করে বন্দর থানায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর ফলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি থানায় নতুন নেতৃত্ব নিয়োগ পেল।
বায়েজিদ থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে চান্দগাঁও থানায় এবং চান্দগাঁও থানার ওসি জাহেদুল কবিরকে নেওয়া হয়েছে বায়েজিদ থানায়। এতে দুটি বৃহত্তর আবাসিক ও বাণিজ্যিক চাপসম্পন্ন থানায় নেতৃত্বে পরিবর্তন হলো। খুলশী থানার ওসি শাহীনুর আলমকে বদলি করে কর্ণফুলী থানায় পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ডবলমুরিং থানার ওসি বাবুল আজাদকে চকবাজার থানায় বদলি করা হয়েছে।
হালিশহর থানার ওসি নুরুল আবছারকে পাঠানো হয়েছে পাহাড়তলী থানায় এবং আকবরশাহ থানার ওসি আরিফুর রহমানকে স্থানান্তর করে পাঠানো হয়েছে সদরঘাট থানায়। অপরদিকে পাহাড়তলী থানার ওসি জামির হোসেন জিয়াকে বদলি করে ডবলমুরিং থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী থানার ওসি জাহেদুল ইসলামকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে খুলশী থানায়।
একই আদেশে বন্দর থানার ওসি মোস্তফা আহম্মেদকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে পতেঙ্গা থানায়। পতেঙ্গা থানার ওসি কাজী সুলতান আহসানকে নেওয়া হয়েছে হালিশহর থানায়। ইপিজেড থানার ওসি কামরুজ্জামানকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে আকবরশাহ থানায়।
এদিকে চকবাজার থানার ওসি শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছে সিটিএসবিতে। এর ফলে চকবাজার থানায় নতুন নেতৃত্ব আসার কথা থাকলেও এখনো সেই পদায়ন সম্পন্ন হয়নি। ইপিজেড থানায়ও নতুন ওসির নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের আওতাধীন থানাগুলোর দায়িত্ব বণ্টনে এই ধরনের রদবদল সাধারণত বিশেষ পরিস্থিতি, নিরাপত্তা চাহিদা বা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইভেন্টের আগে হয়ে থাকে। এবারের পরিবর্তনটি জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছে, যাতে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়। নির্বাচনের সময় থানাগুলোর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয় ও দায়িত্ববণ্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বিশ্লেষকদের মতে, লটারির মাধ্যমে রদবদল প্রক্রিয়া পরিচালনার কারণে স্বচ্ছতা এবং পক্ষপাতমুক্ত দায়িত্ব বণ্টনের বার্তা যায় প্রশাসনের মধ্যে। এতে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের সময় আইনের প্রয়োগ, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং মাঠপর্যায়ের সমন্বয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের নেতৃত্ব মনে করছে, এই পরিবর্তনের ফলে আসন্ন নির্বাচনে নগরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আরও ফলপ্রসূ হবে।
রদবদলের এই সিদ্ধান্তের পর নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসিদের শিগগিরই সংশ্লিষ্ট থানায় যোগদানের কথা রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার, কেন্দ্রভিত্তিক টহল, বিশেষ নজরদারি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।


