মির্জা মেহেদী তমাল
চাকরি করেন রফিক উদ্দিন। বাসা উত্তরা বাউনিয়া এলাকায়। মোবাইল ফোনে তার পরিচয় হয় রেহানার সঙ্গে। কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেম। দু’জনই দু’জনকে কাছে পেতে চান। রেহানা বলেন, রফিক তুমি এসো আমাদের যাত্রাবাড়ীতে। বাসায় কেউ থাকবে না। আমরা কথা বলব। সময় কাটাব। এমন প্রস্তাবে রফিক রাজি হয়ে যান। রফিক যান যাত্রাবাড়ী। ঠিকানামতে পৌঁছে যান সকালেই।
রেহানাকে দেখে ভীষণ খুশি পঞ্চাশোর্ধ্ব রফিক। রেহানা এসে কথা বলেন। বাসায় নিয়ে নিয়ে যান। একটি ঘরে বসতে দেন রফিককে। রফিক ঘনিষ্ঠ হতে চান। এ সময় রেহানা বলেন, ধীরে রফিক। আগে দরজা বন্ধ করে আসি। তুমি রেডি হও। কিন্তু ওই ঘরে রেহানা আসেননি। এসেছে পাঁচ যুবক। তারা ঘরে ঢুকেই হাত-পা বেঁধে ফেলে রফিকের। রফিক কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
রফিক বলেন, আপনারা কারা? যুবকদের একজন বলে, একটু পর টের পাবি আমরা কারা। এরপর আরও দুই মহিলা ওই রুমে প্রবেশ করে। তারা এসেই নিজেদের কাপড় খুলে ফেলে। রফিকের শার্ট-প্যান্টও খুলে নেয়। এরপর দুই মহিলার সঙ্গে রফিকের নগ্ন ছবি তুলতে থাকে। রফিক বুঝতে পারে তিনি ভয়ংকর কোনো চক্রের খপ্পরে পড়ে গেছেন। এরপর আসে লেনদেনের বিষয়। তারা রফিকের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে তার ছবি পাঠানো হবে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে সেসব ছবি।
ভয়-ভীতি দেখানো হয় রফিককে। সারা দিন পর রাতে রফিকের এক বন্ধু সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। অপরাধী সেই চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয় টাকা। অপরাধী চক্র সেখান থেকে কেটে পড়ে। যাওয়ার সময় রফিকের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও নিয়ে যায়। জীবন নিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসেন রফিক। রফিক বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে জানান। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ রুবেল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ১২ দিন পর কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয় মোটরসাইকেলটিটি। পুলিশ জানায়, রুবেলরা পরিকল্পনা করে ব্ল্যাকমেইল করে। ওদের দলে নারী সদস্য রয়েছে। প্রথমে দুর্বল চরিত্রের পুরুষগুলোকে টার্গেট করে নারী সদস্য দিয়ে প্রেমের অভিনয় করায়। প্রেমে মজে যাওয়ার পর শুরু করে ডেটিং, সঙ্গে চিটিং ও ফিটিং!
পুরুষরা বুঝতে সময় নিতেই শেষ হয়ে যায় সব। পুরুষটির স্ত্রীর কাছে নগ্ন ছবি পাঠানোর ভয়, পুলিশে দেওয়ার ভয় আর মিডিয়ায় ছবিসহ নিউজ করার ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, বিকাশ, চেক ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে নেওয়া। একসময় ছেড়ে দিলেও দিনের পর দিন চলতে থাকে ব্ল্যাকমেইলিং। এদিকে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে ঘটনা শেয়ার করতে পারে না বেচারা। কখনো কখনো দু-একটি ঘটনায় থানায় নোটিস হয়। এমনই আরেক ঘটনায় প্রায় ৪ লাখ টাকা আর একটি মোটরসাইকেল নিয়ে নেয় রুবেলের ব্ল্যাকমেইলিং বাহিনী। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ইকবাল হোসেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে আসেন রুবেলকে, উদ্ধার হয় মোটরসাইকেলটি।
আরেক চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শিক্ষিত স্মার্ট সুন্দরী নারী দিয়ে সুকৌশলে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। এরা হলো ফাহাদ ইবনে আবদুল্লাহ ওরফে রেজভী (২৪) ও শারমিন আক্তার টুম্পা (২১)।
পিবিআই জানায়, পিবিআইর (ঢাকা মেট্রোর) একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে বাড্ডা লিঙ্ক রোড থেকে তাদের গ্রেফতার করে। তাদের থেকে দুটি মোবাইল ফোন সেট ও টুম্পার সঙ্গে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির পাঁচটি অশ্লীল ছবি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তির ফোন নম্বর ও ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে। পরে চক্রের পুরুষ সদস্য ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে।
একপর্যায়ে চক্রের সদস্য সুন্দরী নারীকে সহকর্মী পরিচয় দিয়ে নামিদামি রেস্টুরেন্টে চা-কফির অফার করে ও আড্ডা দেয়। এভাবে কিছুদিন চলার একপর্যায়ে চক্রের ওই নারী সদস্য ধনাঢ্য ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। চক্রটি বন্ধুত্বের সুবাদে মেয়েটিকে ব্যবসায়ীর সঙ্গে এককভাবে ব্যবসায়ীর অফিস, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো নিরিবিলি স্থানে পাঠায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটি শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে। এ সময় গোপনে ছবি তোলা হয়। ওই ছবি দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। তাদের দাবি না মানলে ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া বা পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় চক্রের সদস্যরা। এতেও কাজ না হলে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।