দেশের বাজারে আগে থেকেই বেশকিছু নিত্য পণ্যের দাম চড়া। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, রসুন, আলুসহ অনেক নিত্য পণ্যের দাম নিয়ে বছরজুড়েই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে ক্রেতাদের। এরমধ্যেই নতুন করে এই পণ্যগুলোর দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে আবারো বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়ে সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা লিটারে ৯ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে চিত্র আলাদা। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। এছাড়া এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা, প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা, এমনকি নতুন ধানের চাল বাজারে আসার পরও আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম।
এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চাল কেজিতে ২-৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্য কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গত সপ্তাহে ১১৮ টাকায় খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও এই সপ্তাহে একই তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকা। ৬৩৫ টাকার ৫ লিটার বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়। ১৩৫ টাকার এক লিটার বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। লিটারে ১০৭ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা এবং ১১০ টাকা লিটার সুপার পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকা।
ভোজ্যতেল তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৯ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এই ঘোষণা দেয়। তেলের দাম বাড়িয়ে নতুন মূল্য তালিকাও জানিয়ে দেয় সংগঠনটি। এতে তারা জানিয়েছে, নতুন দামে এখন থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকায় বিক্রি হবে, যা ১৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছিলো। এছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেলের দাম পড়বে ৭২৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা ও পাম সুপার তেল ১১২ টাকা দরে কিনতে হবে ক্রেতাদের। সংগঠনটির এই ঘোষণার পর শুক্রবার বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। অথচ দেশের বাজারে গতবছরের অক্টোবরেও প্রতি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫০৫ টাকা। এরপর থেকে তা বেড়েই চলছে। নতুন দাম অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় এখন পাঁচ লিটার তেল কিনতে বাড়তি ২২৩ টাকা গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ওদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক বছরের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
৫ লিটার বোতলের দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশ এবং এক লিটার বোতলের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। গক এক বছরের ব্যবধানে খোলা পাম তেলের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।
এদিকে বাজারে নতুন চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও চালের দাম আরো বাড়ানো হয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৫ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা। গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৬২ টাকা কেজি, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি, এখন সেই চাল চিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের ৫২ টাকা কেজি চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৪ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাত দিন আগেও ছিল ৪৭-৪৮ টাকা। মাঝারি আকারের চাল প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গেল সপ্তাহে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া সরু চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে বেড়েছে মশুর ডালের দামও। কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে বড় দানার মশুর ডালের প্রতি কেজির দাম ছিল ৭৫ টাকা। এখন সেই ডালের দাম ৮০ টাকা কেজি। আর ৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।
এছাড়া বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় পিয়াজের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে দেশি পিয়াজের দাম ছিল ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। এখন সেই পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। একইভাবে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি আমদানি করা পিয়াজের দাম এখন ৪৫ টাকা কেজি। এছাড়া ২০ টাকা কেজি আলু এখন ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি রসুনে বেড়েছে ২০ টাকা। যা এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।