গ্রাম থেকেই আসছে ৭০ ভাগ রোগী

গ্রাম থেকেই আসছে ৭০ ভাগ রোগী

সানাউল হক সানী

ভর দুপুর, মহাখালীতে অবস্থতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে কিছুক্ষণ পর পরই হুইসেল বাজিয়ে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। ফলে গলদঘর্ম অবস্থা হাসপাতালের রোগী উঠানোর দায়িত্বপালনরত কর্মচারীদের। প্রায় একঘণ্টা অপেক্ষা করে সেখানে দেখা মিলল এমন ১১টি অ্যাম্বুলেন্সের। আগত এসব রোগীর প্রায় সবাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও বিষয়টির সত্যতা মিলল। তারা জানান, হাসপাতালটিতে আসা রোগীদের প্রায় ৭০ শংতাশের বেশি গ্রামের। বাকি ৩০ শতাংশ রাজধানী ও আশপাশের কয়েকটি জেলার। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে যে হারে রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাতে অচিরেই এখানে শয্য সংকট দেখা দিতে পারে।

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে আড়াই মাস আগে মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালটি চালু করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ও এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) সমমান শয্যা রয়েছে।

হাসপাতালটির কর্মীরা জানান, এখানে আগত রোগীদের বেশিরভাগই সংকটাপন্ন পর্যায়ের। মূলত আইসিইউ এবং এইচডিইউ সেবার জন্যই রোগীরা এই হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল বুধবার কুষ্টিয়া থেকে বৃদ্ধ মা সুফিয়া খাতুনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন রিজওয়ানা বেগম। সঙ্গে অনার্স পড়–য়া ভাগ্নে রিয়াদ আহমেদ। রিজওয়ানা বেগম জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই মা অসুস্থ। কয়েকদিন ধরে অল্প অল্প শ^াসকষ্ট। কুষ্টিয়ায় পরীক্ষার পর তিনি কোভিড পজিটিভ বলে শনাক্ত হন। আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাকে ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেয়।

 

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। সেই সঙ্গে রোগীর চাপ বাড়ছে ডিএনসিসি হাসপাতালেও। প্রায় প্রতিদিনই ১০-১২ জন করে মারা যাচ্ছেন। পাশাপাশি অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মূলত সিরিয়াস রোগীরাই এই হাসপাতালে ভর্তি হন। অনেক রোগী এতটাই মুমূর্ষু অবস্থায় থাকেন যে একদিনও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসির এই করোনা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের। বাকি ৩০ শতাংশ রাজধানী ও আশপাশের এলাকার। মূলত এসব রোগীর বেশিরভাগই প্রথমে বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে এই হাসপাতালে আসতে আসতে অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। আমাদের এখানে রোগীরা এসেই আইসিইউ, এইচডিইউ সেবা ও হাইফ্লো অক্সিজেন সেবা পাচ্ছেন। কারও প্রয়োজন হলে ভেন্টিলেটর দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের সেবাগুলো অন্য হাসপাতালে পাওয়া যায় না।’

হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৪২৮ জন রোগী রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০ জনের মতো জেনারেল বেডে ও ১৪০ জনের মতো রোগী রয়েছেন আইসিইউতে। বাকিরা রয়েছেন এইচডিইউতে। এভাবে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা তো অবশ্যই আইসিইউ, এইচডিইউও ভরে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন।

সারাদেশ স্বাস্থ্য