মাহমুদ আজহার
করোনা মহামারীর মধ্যেই হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে রাজধানীতে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই শঙ্কার বার্তা দিচ্ছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ জন, যার সবাই ঢাকার অধিবাসী। বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে ৩১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি মাসেই সর্বোচ্চ ৬৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কোনো ঘোষণা না দেওয়া হলেও এরই মধ্যে ঢাকায় একাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) দুজনের ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েক দিনের বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলতে পারে। বৃষ্টির জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে মশা বংশবিস্তারের সুযোগ পায় এবং লার্ভার ঘনত্ব বেড়ে যায়। লার্ভার ঘনত্বের কারণে কিছু কিছু এলাকা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নির্মাণাধীন ভবনের উন্মুক্ত পানির ট্যাংক, খালি কনটেইনারে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। বালতি, বোতলে কিংবা কোনো পাত্রে পানি যেন জমতে না পারে এ জন্য কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকদের খেয়াল রাখতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩১৮ জন। এরমধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩১৪ জন। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী চারজন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষণা অনুযায়ী ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাপ্ত সূত্রে এরই মধ্যে একাধিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। ২০২০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৩৯২ জন, মারা গেছেন তিনজন। গত বছর থেকে করোনার প্রকোপে বিপন্ন হয়েছে জনজীবন। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৯২১ জন এবং মারা গেছেন ১৭ হাজার ৪৬৫ জন। প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান। এর মধ্যে গত মাস থেকেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতেই জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করতে শুরু করেছে এডিস মশা। মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই চলছে বিশেষ চিরুনি অভিযান। ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৩) আবদুল্লাহ আল বাকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার লার্ভা নিধনে আমরা গত কয়েক দিন ধরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। আগের তুলনায় নাগরিক সচেতনতা অনেক বেড়েছে। বাসাবাড়িতে এডিসের লার্ভা খুব একটা পাওয়া যায় না। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা কর্মী পাঠিয়ে এসব জায়গায় স্প্রে করছি। সব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীদের সচেতন হওয়া জরুরি। ডিএনসিসি এলাকায় অভিযান, জরিমানা : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার ঠেকাতে মোবাইল কোর্টে চারটি মামলায় ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসির ৩ নম্বর অঞ্চলের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল বাকী পরিচালিত মোবাইল কোর্টে তিনটি মামলায় ৭০ হাজার টাকা এবং ৬ নম্বর অঞ্চলের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরিন পরিচালিত মোবাইল কোর্টে একটি মামলায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মোট চারটি মামলায় ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় মাইকিং করে জনসচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয় এবং সবাইকে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ‘তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন’ মানার পাশাপাশি ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর আগে ১২ জুন এডিস মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ২১টি মামলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে মশার লার্ভা ও উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট করা হয়।