রাজধানীতে যানজট নিরসনে ঢাকার প্রবেশপথে চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও বাস ডিপো স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো নির্মিত হলে কোনো দূরপাল্লার বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না। নগরীর যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।
এর মধ্যে রয়েছে নৌ রুট পুনরুদ্ধার, নতুন সড়ক নির্মাণ, বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ৫৩টি চৌরাস্তা প্রশস্তকরণ, অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন, বাস রুট রেশনালাইজেশন, রাস্তার অবৈধ দখলদারদের অপসারণ, পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্থান নিশ্চিতকরণ, আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ। নেওয়া হচ্ছে অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ।
নগর ভবনে নিজ কার্যালয়ে বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ফজলে নূর তাপস। সরকার ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে সমন্বয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মেয়র তাপস।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাস রুট রেশনালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় বিরুলিয়ার বাটুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর, কামরাঙ্গীরচরের তেঘরিয়া ও সোনারগাঁর কাঁচপুরে চারটি বাস টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। একবার টার্মিনালগুলো তৈরি হয়ে গেলে আন্তঃজেলা বাসগুলোকে রাজধানীতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।’
মেয়র আরও জানান, তারা কালুনগর থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বাম লেন প্রশস্ত করে এবং বিদ্যমান ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ৫৩টি চৌরাস্তা উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেট অব থিংস ট্রাফিক সিস্টেম বাস্তবায়ন করছি।’
ডিএসসিসির মেয়র আরও বলেন, রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমাতে রাজধানীর আশপাশের নৌ রুটগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে এগুলোকে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডকে ঘিরে একটি সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই করে নতুন ওয়ার্ডগুলোর খাল-নদীর পাশে চার লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মেয়র বলেন, স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে হেঁটে যাওয়া লোকেদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তারা হাঁটার উপযোগী করে ফুটপাত প্রশস্ত করবেন। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে তিনটি উড়ালসড়কের নিচের জায়গাগুলোকে নতুন করে সাজাতে পাঁচ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন ও লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ
মেয়র বলেন, শহরের রাস্তায় রিকশা-ভ্যানের মতো প্রায় সাত লাখ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে, যা যান্ত্রিক যানবাহনের পাশাপাশি শহরের যানজট সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ৩৪ বছর পর অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন ও তাদের লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধিত হয়েছে। সেগুলোর ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নম্বর প্লেট ছাড়া কোনো অযান্ত্রিক যানবাহনকে নগরীর রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তাপস বলেন, সিটি করপোরেশনের এখতিয়ারে রূপান্তরিত অযান্ত্রিক যানবাহন চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য তারা শিগগিরই কাজ শুরু করবেন।
বাসসকে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, ‘নগরীর প্রধান সড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়। সেই গাড়িগুলোর পৃথক পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছি এবং কাউকে অনির্ধারিত জায়গায় তাদের গাড়ি পার্ক করার অনুমতি দেওয়া হবে না।’
মেয়র আরও বলেন, সার্বিক সড়ক ব্যবস্থাপনায় রদবদল করতে ডিএসসিসির নেওয়া সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা তারা পর্যালোচনা করছেন। ব্যবস্থাপনার অধীন কিছু রাস্তা শুধু হাঁটার জন্য ঠিক করা হবে। কিছু রাস্তা একমুখী ও দ্বিমুখী করে যানবাহন চলাচলের জন্য নির্ধারিত হবে। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য আলাদা লেন থাকবে।
তাপস আরও জানান, গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে তারা বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী ১ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ১২০টি বাস নিয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে বিআরআর ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি। বিআরআর সিস্টেমের সফল পরীক্ষা চালানোর পর ৪২টি রুটে ৯টি ক্লাস্টারে ২২টি কোম্পানির অধীন বাস চলাচল করবে।’