নানাবিধ চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার হাতছানি নিয়ে ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি নতুন ভেন্যু রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারেই শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এটি দেশের ২৬তম বাণিজ্যমেলা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত ফাইলের সারাংশ তিনি অনুমোদন করে দিয়েছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
জানা গেছে, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরানা স্থান ছেড়ে রাজধানীর অদূরে নতুন শহর পূর্বাচলে এই মেলা আয়োজনে নানা রকমের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে প্রথম বছর হিসেবে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা এবছর সম্পন্ন করতে পারলে আগামী বছরগুলোয় আর পেছনে তাকাতে হবে না বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, পূর্বাচলের রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক বাণিজ্য সচিবের বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ও ইপিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাজধানী থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় আগতদের মেলাস্থলে পৌঁছাতে যাতে বেগ পেতে না হয় সেদিকটির প্রতি নজর রেখে আসন্ন বাণিজ্যমেলায় সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরসিটিসির বাস চলাচল করবে। এছাড়া চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্বাচলের রাস্তা মেরামত করে তা চলাচলের উপযোগী করা হবে। চলতি ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোর মধ্যেই পূর্বাচলের ১০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের জন্য উপযোগী থাকবে। দুই লেন মিলিয়ে দুইপাশে চার লেনে গাড়ি চলবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে।
ইপিবি জানিয়েছে, কেন্দ্রের ভেতরে সবমিলে ৩০৯টি স্টল থাকবে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। চাইলেই চারশ করে মোট আটশ দোকানের স্টল বানানো যেতো। কিন্তু সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ইপিবি কর্তৃপক্ষ দুইশ স্টল বানিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে এক স্টল থেকে আরেকটির দূরত্ব এবং মানুষের চলাচলের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। ভেতরে ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল রয়েছে, যার মধ্যে ২২টি স্টল ইতোমধ্যে বরাদ্দ হয়েছে।
তবে মেলাকেন্দ্রের ভেতরে থাকা জায়গার মধ্যে অধিকাংশই মানুষের চলাচলের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। আর কেন্দ্রের বাইরে ডানপাশে স্টল বসলেও, আরেকদিক সৌন্দর্যের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। মেলার ডিজাইন সেভাবেই করা হয়েছে। নতুন স্থানে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্যমেলায় আগতদের গাড়ি রাখার জন্য বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানেই এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। সেন্টারের দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে আর এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ রয়েছে।
ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী পহেলা জানুয়ারি তিনি মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করবেন। নতুন স্থানে মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই।
প্রসঙ্গত, করোনার কারণে ২০২১ সালে বাণিজ্যমেলা হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখ দেশের সরকারপ্রধান এ মেলার উদ্বোধন করেন।