১০ বিভাগীয় নগরে গণসমাবেশের পর এবার যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ ৩৩ দলকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা করতে যাচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। জানা গেছে, ২০-দলীয় জোটের অন্য দলগুলো একইভাবে বিএনপির কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরামের একাংশসহ আরও কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব দলকে নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন হবে। কমিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাড়াও থাকবেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। অন্য দলের নেতারাও থাকবেন। এই লিয়াজোঁ কমিটিই দেবে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি, করবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন। এ ছাড়া মিডিয়া সেল, প্রচার সেল, আইনি সহায়তা সেলসহ কয়েকটি সেল থাকবে এ কমিটির অধীনে। বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি যে ১০ দফা ঘোষণা করেছে এর সঙ্গে মিল রেখেই অন্য দলগুলোও নিজেদের দাবিনামা পেশ করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ আলাদাভাবে ১৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যুগপৎ আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন হলে এটি ১০ দফার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। তারা জানান, শিগগিরই বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের বৈঠক হবে। বৈঠকে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণ ও সমন্বয় করা হবে। কমিটি গঠনের পর অভিন্ন দাবিতে দলগুলো আলাদা কর্মসূচি পালন করবে। তারা জানান, যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে বিএনপি শরিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিকবার সংলাপ করেছে। সংলাপ থেকে আন্দোলনের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের আন্দোলন শেষ করেছে বিএনপি। ২৪ ডিসেম্বরের গণমিছিল থেকে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) যুগ্ম-মহাসচিব এ এস শামীম বলেন, ‘সরকার পতন আন্দোলনে বিএনপির ১০ দফা দাবির সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। সমমনা দলগুলো একসঙ্গে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করবে বলে বিশ্বাস করি। ২৪ ডিসেম্বর আমরা গণমিছিলে অংশ নেব। এর মাধ্যমে সরকার পতন আন্দোলন আরও জোরদার হবে।’ গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে যুগপৎ আন্দোলন, ক্ষমতাসীন সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের লক্ষ্যে ১৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি।’
৩৩ দলে কারা : যুগপৎ আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, কমরেড সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, ড. রেজা কিবরিয়া ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রয়েছে। ২০-দলীয় জোটের দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন বিএলডিপি, ড. ফরিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশ জাতীয় দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাগপা, ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), সাম্যবাদী দল, ডেমোক্র্যাটিক লীগ, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, মাইনরিটি পার্টি, জাগপা (অপরাংশ) রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ২০-দলীয় জোট থেকে একসময় বেরিয়ে যাওয়া ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।
যেভাবে শুরু : চলতি বছরের শুরুতে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের জন্য ‘জাতীয় ঐক্য’ ঘোষণা করে বিএনপি। এ প্রক্রিয়ায় সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দুই দফায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংলাপ হয়। এর মধ্যে ২০-দলীয় জোটের আওতাধীন ২২ দল, সাতদলীয় জোটের শরিক দল, গণফোরামসহ বাম ও ইসলামী বেশ কয়েকটি দল রয়েছে। এসব দলের সঙ্গে বৈঠকে সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। একই সঙ্গে ক্ষমতা বদলের রাষ্ট্র সংস্কার রূপরেখা এবং আন্দোলনের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করে দলগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র সংস্কার ও আন্দোলনের জন্য ২৭ দফা এবং ১০ দফা কর্মসূচি নির্দিষ্ট করে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেছি। সে ক্ষেত্রে নৈতিক দিক থেকে আমাদের দলের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ডিসেম্বর ১০ দফা দাবির পক্ষে প্রথম কর্মসূচি। আমরা আহ্বান জানিয়েছি যুগপৎ আন্দোলন করার। এখন যুগপৎ হবে কি না, সেটি ওই দিনই দেখা যাবে।’