নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে ২০ কোটি টাকা দাবি করত একটি চক্র। এ সময় চক্রটির সদস্যরা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের মূল হোতা বাবা-মেয়েকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. ইয়াসিন (৪৬) ও তাঁর মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন (২২)।
আজ শুক্রবার সকালে নোয়াখালী থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।
আজ দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
আপনার মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আপনি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন।
এ জন্য দলের ফান্ডে আপনাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নের এমন আশ্বাস দিয়ে আসছিল একটি প্রতারক চক্র।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হতে শুরু করেছে প্রতারকচক্র। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, সম্প্রতি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করে প্রতারকরা বলেন, ‘আপনার মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আপনি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। এ জন্য দলের ফান্ডে আপনাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। আপনি এই টাকা রেডি রাখবেন। যখন জমা দিতে বলা হবে তখন দেবেন।
আর অল্প সময়ের মধ্যে আপনি দেখা করবেন।’
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘২০ কোটি টাকা বলায় এই মনোনয়ন প্রত্যাশী বিষয়টি দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অবহিত করেন। পরে তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে, একটি প্রতারকচক্র গণভবনের নাম ব্যবহার করে এমন একটি প্রতারণার চেষ্টা করছে। সেই ফোন কল করা ব্যক্তিকে নোয়াখালী থেকে আটক করা হয় ‘
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার করার পর গোয়েন্দা পুলিশ দেখতে পায়, চক্রটি বাবা ও মেয়ে মিলে গড়ে তুলেছে। মেয়ে ও বাবা দুজনে মিলে বিভিন্ন জনকে ফোন করেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করছেন। গ্রেপ্তার শেষে উদ্ধার হওয়া মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ড পাওয়া গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, একেক সময়ে প্রতারণার একেকটি মৌসুম থাকে। আগে চাকরি, পোস্টিং, বিদেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে অনেককে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে চলছে মনোনয়ন প্রতারণা। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেহেতু অনেক মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন কিনেছেন, তাই তারা প্রার্থীদের ফোন করে নমিনেশন পাবেন জানিয়ে ফান্ডে টাকা দিতে বলেন।
ডিবি জানায়, ‘অনেকেই তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা টাকা না দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাঁদের অভিযোগে আমরা প্রতারকদের গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। তাঁদের রিমান্ডে এনে এই চক্রে অন্য কারা জড়িত সেটা জানার চেষ্টা করছি।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নামে নম্বর ট্রু কলারে সেভ করে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু যারা টাকা দিচ্ছেন তাঁদের আরো সতর্ক হতে হবে। কারণ একজন প্রার্থীকে নমিনেশন দেওয়ার আগে কয়েকটি ধাপে যাচাই-বাছাই করা হয়। ট্রু কলারে নাম সেভ করা দেখে কল পেলেই টাকা দিয়ে নমিনেশন পাবেন এটা এত সহজ না