নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস আজ। দীর্ঘ নয় বছরের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে তৎকালীন স্বৈরশাসকের। এদিন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ আন্দোলনে প্রাণ হারান নূর হোসেন, সেলিম, দেলোয়ার, তাজুল, ডা. মিলন, নূরুল হুদা, বাবুল, ফাত্তাহসহ অনেকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ দিবসটি পালন করবে।
‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনো নানাভাবে গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না—গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় প্রত্যয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র তাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। ইতিহাসের এ বর্বরতম হত্যার মাধ্যমে অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করা হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নব্বই-পরবর্তী সময় থেকে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আমাদের সরকার দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশে সব সময় গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র আরো সুসংহত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অব্যাহত আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী শাসক গণআন্দোলনের কাছে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর নতিস্বীকার করে পদত্যাগে বাধ্য হয়। বহু শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ভোটের অধিকার। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতি সব শহীদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’ তিনি গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, সবাই মিলে গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করি। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’