নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য দায়ের করা আপিলের তৃতীয় দিনের শুনানি আজ (বৃহস্পতিবার) সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে শুনানি চলেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, যিনি ইন্টারভেনর হিসেবে আদালতে শুনানি করছেন। এর আগে, গতকাল (২২ অক্টোবর) রিটকারী বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া শুনানি শেষ করেন।
গত ২১ অক্টোবর, নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য প্রথম দিন থেকেই আপিলের শুনানি শুরু হয়। এর আগে, গত ২৭ আগস্ট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হয়েছিল, যাতে সুপ্রিম কোর্ট আপিলের অনুমতি দেয়।
১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর, ১৯৯৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়, যা ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্টে খারিজ করা হয়।
তবে, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় প্রদান করে। এর পরবর্তী সময়ে, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী কার্যকর হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ হয়।
২০১১ সালের এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন পুনরায় আবেদন করেন। এর মধ্যে ৫ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
এরপর, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ১৬ অক্টোবর রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারও গত বছর ২৩ অক্টোবর রিভিউ আবেদন করেন।
আইনজীবীরা জানান, এই রিভিউ প্রক্রিয়া আদালতের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত নয়, বরং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বর্তমান সরকারের আইনগত স্থিতি এবং ভবিষ্যত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য এই রায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
এছাড়া, নওগাঁর রানীনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য গত বছর আবেদন করেন, যা এই আপিল প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এখন পর্যন্ত, এ বিষয়ে শুনানি চললেও, আপিল বিভাগের পরবর্তী রায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে পারে, যা বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যতকে নতুন দিকে প্রবাহিত করবে।