বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসৃজনে ৪২৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসৃজনে ৪২৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে দেশে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিকখাতে কর্মসংস্থান তৈরিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, একনেকে ২ হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২ হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ৪২৫ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে। অনুমোদিত ১০ প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নতুন প্রকল্প এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প।
এম এ মান্নান বলেন, ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুন:একত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক’ শীর্ষক যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে, এর আওতায় কোভিডের কারণে বিদেশ ফেরত ২ লাখ কর্মীর প্রত্যেককে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের ৪২৫ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, নানা কারণে অভিবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে এসেছেন। অভিবাসন দেশের উন্নয়নে দীর্ঘ সময় তারা কাজ করেছেন। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে এসব দক্ষ কর্মীদের দেশের জন্য কাজে লাগানোর।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, কোভিডের প্রভাবে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে ২ লাখ শ্রমিককে এই প্রকল্পের আওতায় সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, কোভিডের কারণে যেসব অভিবাসীরা দেশে ফেরত এসেছেন, প্রকল্পের আওতায় সেই প্রত্যাগত কর্মীদের তথ্যসমৃদ্ধ ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খান বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২ লাখ শ্রমিককে সহায়ত প্রদান করা হবে। তবে পরবর্তীতে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন,  প্রত্যেক কর্মীকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে যেটা দেয়া হবে, এতে শ্রমিকদের প্রাথমিক খরচ  মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদনশীল কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয় সনদ পেতে সহায়ক হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হষরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হেল্প ডেস্ক থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরত আসার তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রকল্পের আওতায় কোভিডের প্রভাবে বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মীকে বাছাই করা হবে। এরপর স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সনদের ব্যবস্থা করে দেশে-বিদেশে চাকুরির পেতে সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কর্মীদের আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপন ও ঋণ পেতে সহযোগিতা দেয়া হবে। একইসাথে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানুয়ারি ২০২১ হতে ডিসেম্বর ২০২৩ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
মোট ৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ৩টি আন্ডারপাস এবং পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন যে, জনসাধারণ ও যানবাহনের নিরাপদ এবং নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করতে নতুন সড়কে আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ইউলুপ যথাযথভাবে নির্মাণ করতে হবে।
মোট ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেদেশের সব ধরনের নিয়ম মেনে এটি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় তিনি স্মরণ করেন যে, স্বাধীনতার পর ওইসিডিভূক্ত দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকার ব্যয় বৃদ্ধি করে জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের ৩য় সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রকল্পের আওতায় কম্পিটার প্রশিক্ষণ পরিচালনা কার্যক্রম রাজস্ব বাজেটের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এর ফলে অনেক বেশি সংখ্যক মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।
একনেক ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পনগরীতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনের পরামর্শ দেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-৪৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ  জেলার লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ৪৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রণ ব্রীজ পুন:নির্মাণ/পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৭২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্প, ১৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং এন্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চ -এর সেবা ও গবেষণা সুবিধাদির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং ১১২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিংহ জোন)  প্রকল্পের ১ম সংশোধিত অনুমোদন দেয়া হয়।

অর্থ বাণিজ্য জাতীয়