আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ রোববার বাদ আছর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে আশরাফের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স বনানী কবরস্থানে এসে পৌঁছায়। দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে চিরবিদাই জানাতে উপস্থিত হন বনানী কবরস্থানে।
এর আগে সকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সর্বস্তরের নাগরিক, রাজনৈতিক সহকর্মী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দসহ বিপুলসংখ্যক শুভাকাঙ্খী ও গুণগ্রাহীরা শরিক হন।
নামাজে জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
প্রথমে মরহুমের কফিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৪ দলের পক্ষে মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে মরহুমের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
নামাজে জানাজা শেষে তাকে হেলিকপ্টারে কিশোরগঞ্জে নেয়া হয়। মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এবং তৃতীয় নামাজে জানাজা ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়।
কিশোরগঞ্জে থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে সৈয়দ আশরাফের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক মানুষ তার জানাজায় অংশ নিয়েছেন। জানাজায় ইমামতি করেন শহরের পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা খলিলুর রহমান।
জানাজায় সৈয়দ আশরাফের ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম, ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও ড. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখানে জাতীয় পতাকা মোড়ানো কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা। সেখান থেকে মরদেহবাহী গাড়ির বহর পৌঁছে শোলাকিয়া মাঠে। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে শোকাবহ পরিবেশে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় কিশোরগঞ্জবাসী।
ময়মনসিংহ থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে রোববার দুপুর ২ টা ৫৫ মিনিটে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন আঞ্জুমান ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুললাহ আল মামুন।
জানাজা শুরুর আগে মরহুম নেতার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানাজার আগে র্গাড অব ওনার প্রদান করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে থাইল্যান্ড থেকে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিমান বন্দরে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আশরাফের মরদেহ গ্রহণ করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর ২১, বেইলি রোডে সৈয়দ আশরাফের সরকারি বাসভবনে আনা হয়।
বৃহষ্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ আশরাফ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি এক কন্যাসহ রাজনৈতিক সহকর্মী, বহু আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী এবং নেতা-কর্মী রেখে গেছেন।