দেশে বছরে অকেজো ৪০ হাজার কিডনি, বেশি ঝুঁকিতে নারীরা

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন এবং বছরে ৪০ হাজারের বেশি কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের এক জরিপ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে ভয়াবহ এ তথ্য।

তবে কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছেন নারীরা। পরিবারের সহযোগিতার অভাবে নারীদের একটা বড় অংশ এই রোগে চিকিৎসকের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেন না। এ ছাড়া অধিকাংশ নারী তাদের সমস্যাগুলো নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে রাখার কারণে এই রোগে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

বারডেম হাসপাতালের ড. মেহরুবা আলম বলেন, ডাক্তারের কাছে নারীদের অ্যাকসেস এখনও পুরুষের তুলনায় কম। চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য কতটা সহযোগিতা ও অর্থ পরিবার থেকে পাওয়া উচিত তা তারা গুরুত্ব দেন না। তাই নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি।

নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি আরও প্রকট উল্লেখ করে ড. মেহরুবা আলম বলেন, নারীদের কিডনির সমস্যা একটা পর্যায়ে তাদের সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি সন্তান এসেও যায়, তাতে অনেক জটিলতা থাকে।

কিডনি রোগে আক্রান্ত এসব রোগী সাধারণ দুই ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এ দুই চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে- ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন। তবে এই দুই চিকিৎসা পদ্ধতিই ব্যয়বহুল।

রাজধানীর শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের প্রতিদিনই কিডনি রোগীর অনেক ভিড়। কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে ডায়াবেটিস। এ জন্য ডায়াবেটিক হাসপাতালে কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য বড় ইউনিট রয়েছে।

কিডনি ডায়ালাইসিসে খরচ কেমন?

কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যয় সরকারিভাবে নির্ধারিত হয় না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ব্যয় অনেক বেশি। এবার প্রয়োজনে একাধিকবার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। একজন রোগীকে সপ্তাহে দুই বা তিনবার পর্যন্ত ডায়ালাইসিস করাতে হয়।

বারডেম হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সারোয়ার ইকবাল বলছেন, কিডনি রোগীদের পরিবারগুলোকে এই ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। যেসব রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয় তাদের ৯০ ভাগ রোগীই এক বা দুইবার ডায়ালাইসিস করার পর আর এটা করাতে পারে না টাকার অভাবে।

১০ভাগের কম লোক এটার ব্যয় ভার বহন করতে পারে। এছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপন করার ব্যয় কিছুটা কম হলেও এর ডোনার পাওয়া যায় না।

কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রধান অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, ৮০ভাগ কিডনি রোগী চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের ৪০ হাজার রোগীর মাত্র ২০ভাগকে ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপন করে দিতে পারি। তাতে ৮০ভাগ রোগীই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করছে।

কী করা উচিত

কিডনি রোগের চিকিৎসার ব্যয় এবং সুযোগ সুবিধা কোনোটাই আমাদের দেশে সেভাবে গড়ে উঠেনি। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কিছু ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে উঠেছে।

এছাড়া ঢাকার বাইরে বড় কয়েকটি শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে সীমিতপর্যায়ে এই চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনি রোগীর তেমন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।

কিডনির চিকিৎসা বিস্তারে কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে উল্লেখ করে অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, একজন রোগীকে কত কম খরচে চিকিৎসা দেয়ার কথা লাভজনক সেন্টারগুলোতো কখনোই চিন্তা করে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা- এমন সাত আটটা শহরে কিছু কিছু ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে এবং সেটা একেবারে নগণ্য। এছাড়া গ্রাম পর্যায়ে নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগামী ২০ বছরে সব কিডনি রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। তবে কমিউনিটি ক্লিনিক যদি উদ্যোগ নেয় তবে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিডনির চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসার ইউনিট করা এবং চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ