গাজার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের হামলা থামেনি। একইসঙ্গে পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় দেশটির সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। আল জাজিরার সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা এই আঞ্চলিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জোরদার করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দেশটি এই অঞ্চলে দখল আরও পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের জলপাই সংগ্রহে বাধা দিচ্ছে, হেনস্তা করছে এবং গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ পশ্চিম তীরের “সার্বভৌমত্ব” ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, এতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাব্য স্থাপনার বিপজ্জনক ধারণা রোধ করা যাবে।
সিরিয়ার দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ ও হামলা বাড়ছে। বিশেষ করে কুনেইত্রা প্রদেশের আল-রাজানিয়া ও সাইদা আল-হানুত গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনী সাময়িক চেকপোস্ট স্থাপন করেছে। স্থানীয় সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, তারা এক স্থানীয় রুটি সরবরাহকারীকে সাময়িক আটক করেছিল।
জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রতিনিধি ইব্রাহিম ওলাবি বলেছেন, ইসরায়েলকে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং গোলান মালভূমিসহ দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যেতে হবে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলা অব্যাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী ইউএনআইএফআইএল জানিয়েছে, তাদের টহল দলের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ হলে তারা ইসরায়েলি ড্রোনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গত রোববার ইসরায়েল বালবাকের নবি চিত ও দক্ষিণ লেবাননের নাকুরা এলাকায় দুইজনকে হত্যা করেছে। যদিও ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তবু ইসরায়েল এখনও লেবাননের ভেতরে অবস্থান রেখে হামলা চালাচ্ছে।
বেসামরিক লোক নিহত হওয়া ছাড়াও, পুনর্গঠন কার্যক্রমের যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামলার লক্ষ্য হিজবুল্লাহকে দুর্বল করা। লেবানন সরকার ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ে জবাবদিহির দাবি করেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সেখানে হামলা চলছেই। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাফাহ সীমান্ত দিয়ে অসুস্থদের দেশত্যাগে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমনকি তৃতীয় ধাপের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীও চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের চলমান হামলা ও সীমান্ত হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা এবং আঞ্চলিক চাপ সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।


