রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় অভাযান চালিয়ে জাল স্ট্যাম্প তৈরির ছাপাখানার সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে এ ছাপাখানা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
এসব জাল স্ট্যাম্প ব্যবহারে দুর্নীতি বাড়ছে, একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ পরিচালিত এক অভিযানে জাল স্ট্যাম্প তৈরির ছাপাখানার সন্ধানসহ এ চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- আবু ইউসুফ ওরফে পারভেজ ওরফে রানা, আতিয়ার রহমান সবুজ, নাসির উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম ওরফে সোহেল।
এ সময় ওই ছাপাখানা থেকে ২০ কোটি ২ লাখ ২৪ হাজার টাকার মূল্যের ১৩ লাখ ৪০ হাজার জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ১৯ হাজার ৪৮০ টি জাল কোর্ট ফি এবং জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির নগদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ১ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ১৮ টি চেকের পাতা, ১১৪ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার, ডাকবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিল ও বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়। ওই ছাপাখানা থেকে আরও বিপুল পরিমাণ কাগজ জব্দ করা হয়, যা দিয়ে অন্তত আরও শত কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প বানানো সম্ভব ছিলো।
শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গ্রেফতার চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ ওরফে পারভেজ ওরফে রানা। চক্রটি ২০১৭ সাল থেকে কম্পিউটার ও প্রিন্টার ব্যবহার করে জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে বিক্রি করতো। তবে ২০১৯ সাল থেকে গোপনে ছাপাখানা বসিয়ে বৃহৎ পরিসরে জাল স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করে।
জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুত, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ এ তিন ধাপে এসব জাল স্ট্যাম্প ক্রেতা পর্যায়ে পৌঁছে দিতো। তাদের কারখানা থেকে বরিশাল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার নামে খাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, তারা এসব জাল স্ট্যাম্প দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন শিল্প করাখানা, হাসপাতাল, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমনকি আদালতেও এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হতো। তবে প্রতিষ্ঠানের মূল কর্তা-ব্যক্তিরা হয়তো বিষয়টা জানেও না, যারা এগুলো কেনার দায়িত্বে থাকেন পিয়ন বা ক্লার্ক তারাই কমদামে এগুলো কিনে থাকে। এটাও এক ধরনের অপরাধ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে তারা এ ছাপাখানা স্থাপন করে জাল স্ট্যাম্পের ব্যবসা শুরু করে। তাদের প্রেস মেশিটনটি জার্মানির, অনেক দামি। কাগজ দিয়ে হুবহু নকল করে এসব বানানো হতো।
কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প, জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাগজ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে চক্রে শুধু চারজনই নয় আরও কেউ জড়িত আছে, এটি অনেক বড় একটি চক্র। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। আশা করছি, আমরা পুরো চেইনটাকে ধরতে সক্ষম হবো।
ডিবি প্রধান বলেন, এসব জাল স্ট্যাম্পে কেউ হয়তো দলিল করছেন, কিন্তু স্ট্যাম্পটাই নকল। এসব ব্যবহারে দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে, সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
এজন্য সবাইকে রেজিস্টার্ড জায়গা থেকে স্ট্যাম্প কেনার পরামর্শ দেন তিনি। আসল স্ট্যাম্প ইউভি মেশিনে দিলে জলছাপটা জ্বল-জ্বল করে এবং কালো রেখাগুলো দৃশ্যমান। কিন্তু নকল স্ট্যাম্পে এগুলো দৃশ্যমান না।