যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে অর্ডার দেওয়া পণ্য না নেওয়া কিংবা অর্থ পরিশোধ না করার শর্ত দিয়েছে তৈরি পোশাকের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিবৃতিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ববাণিজ্যের ধরন এখন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। মানবাধিকার এবং পরিবেশের বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক বিষয়ও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু বাণিজ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, সে কারণে বাণিজ্যনীতি-সংক্রান্ত যে কোনো পরিবর্তনই উদ্বেগের। তিনি বলেন, বিজিএমইএর একটি সদস্য কারখানার বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে এলসির একটি অনুলিপি তাদের নজরে এসেছে। এলসিতে ক্রেতার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া কোনো দেশ, অঞ্চল বা দলের সঙ্গে লেনদেন করব না। কোনো ধরনের বিলম্ব, অপারগতা কিংবা তথ্য প্রকাশের দায়ও নেব না।’ এ কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়। এটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং কোনো দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ নয়। সুতরাং, একে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে– এভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি এবং প্রটোকল থাকতেই পারে। তবে একটি এলসি কপি দাপ্তরিক কোনো ঘোষণা নয়। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক মিশন কিংবা সরকারি উৎস বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জাতীয় তথ্য পায়নি বিজিএমইএ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্মারক বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্মারকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পদক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য নেওয়া হয়নি। বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মাত্র।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এলসির ধারা অন্তর্ভুক্তিকে তারা সমর্থন করেন না। এটি বাণিজ্য নীতিমালার লঙ্ঘন। এ ধরনের শর্ত দেওয়ায় ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র না-ও খুলতে পারে। কেননা, তৈরি পোশাক রপ্তানির পর অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। এ ঘটনায় উদ্যোক্তারা টেনশনে পড়তে পারেন। তবে ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি বিশ্বের সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, সেহেতু অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের শর্ত হয়তো কেউ কেউ দিচ্ছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তাদের অর্ডার দেওয়া পণ্য নেবে না কিংবা অর্থ পরিশোধ করবে না– এমন শর্ত যুক্ত করে বাংলাদেশের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ঋণপত্র বা এলসি দিয়েছে সে দেশের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। পণ্য জাহাজীকরণের পরও যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলেও অর্থ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে শর্ত দেওয়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম জানা যায়নি।