জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ৫০ বছর: জাতি আজ পালন করছে জেলহত্যা দিবস

জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ৫০ বছর: জাতি আজ পালন করছে জেলহত্যা দিবস

জাতীয় ডেস্ক

আজ ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম মর্মান্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয় তীব্র অস্থিতিশীলতা। ওই ঘটনার পরপরই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে বন্দি অবস্থায় একই বছরের ৩ নভেম্বর গভীর রাতে হত্যা করা হয় এই জাতীয় নেতাদের। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি পরবর্তীতে “জেলহত্যা মামলা” নামে পরিচিতি পায়।

ঘটনার তদন্তে দেখা যায়, ১৫ আগস্টের ঘটনার ধারাবাহিকতায় এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। জাতির নেতৃত্বকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যেই বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের এই চার শীর্ষ নেতাকে।

১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কারণে মামলার তদন্ত দীর্ঘ ২১ বছর স্থগিত থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত জেলহত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে তিনজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে রায় ঘোষণার সময় অধিকাংশ আসামি পলাতক ছিলেন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন বরখাস্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর তিনি ২০২০ সালের এপ্রিলে দেশে ফেরার সময় ধরা পড়েন এবং একই বছরের ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

বর্তমানে জেলহত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামির মধ্যে ১০ জনই বিদেশে বা আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

৩ নভেম্বরের এই দিনটি জাতির ইতিহাসে শুধু একটি স্মরণীয় দিন নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামের ধারাবাহিকতার এক গভীর স্মারক হিসেবেও বিবেচিত।

জাতীয়