সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে সরকার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে সরকার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে সরকার। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, লাইকির মতো অ্যাপের মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো বেড়ে যাওয়ায় এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রস্তাবিত আইনে বিদেশি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ডাটা সেন্টার বা শাখা অফিস বাংলাদেশে স্থাপনের বাধ্যবাধকতার বিধান রাখা হচ্ছে। এটি করা গেলে অপপ্রচারকারীদের খুব সহজেই শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। বর্তমানে এমন কর্মকাণ্ড মনিটরিং করার সুযোগ থাকলেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রায় নেই।
এদিকে বিদেশে বসে যাঁরা রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত, তাঁদেরকে বিচারের আওতায় আনতে ২০০১ সালে প্রণীত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গত ২৪ জুন পর্যন্ত সংশোধনী নিয়ে গণমত নেয় টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
সংশোধিত আইনের ৩ নম্বর ধারা মতে, যদি কোনো ব্যক্তি বিদেশে বসে দেশের কোনো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতির সাহায্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটান, তাহলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইন এমনভাবে প্রয়োগ হবে যেন অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশের ভেতরেই সংঘটিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, আপত্তিকর ও খারাপ উদ্দেশ্যমূলক কনটেন্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে সরকার। কিন্তু খুব বেশি সাড়া মেলে না। সার্বিক বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও কিছু পরিবর্তন, সংযোজন প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট আইনগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক কিছু অ্যাড্রেস করা নেই। সেগুলো করার কাজ চলছে। আইন সংশোধন করে সেই আইন মেনে চলার জন্য ওদের বাধ্য করতে হবে। চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’
দেশে দিন দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়ে চলেছে। এখন স্মার্টফোন দিয়ে মুহূর্তেই স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে ভাইরাল করা সম্ভব। এই প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায় নেতিবাচক ও অপরাধমূলক কাজে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশে বসে একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে তাদের অনুসারীরা দ্রুত সেগুলো শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পা রেখে জঙ্গি ও উগ্রবাদ বিস্তার করছে এমন স্পর্শকাতর তথ্যও রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর কাছে। সম্প্রতি এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে বিদেশে নারীপাচারের মতো ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। ফলে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই।
এ অবস্থায় কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প দেখছেন না তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, দেশ আজ শতভাগ ডিজিটাইজড। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সুফল যেমন মিলছে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চক্র সরকারবিরোধী অপপ্রচারেও লিপ্ত রয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় গুজব ও উসকানি ছড়ানো হয়। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের সুযোগ বর্তমানে নেই। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেশের ভেতরে অবস্থানরত চক্রান্তকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ থাকে। কিন্তু ডিজিটাল অপরাধের কোনো সীমারেখা নেই। বিভিন্ন দেশে বসে একটি ইস্যু তুলে ধরে সেটিকে বুস্ট করে ভাইরাল করার চেষ্টা করে। নতুন আইন পাস হলে বিদেশে বসে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদেরও বিচারের আওতায় আনার সুযোগ থাকছে। বিশেষ করে ইউটিউব এবং ফেফেসবুক।
অপরাধ তথ্য প্রুযুক্তি